দক্ষিণের ১৪৭৫ কিলোমিটার নৌপথ খননে সমীক্ষা শেষ

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১ হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খনন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সমীক্ষা প্রকাশ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বরিশাল সার্কিট হাউসে
প্রথম আলো

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১ হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খনন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সমীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সমীক্ষার প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দক্ষিণাঞ্চলের ১ হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার নদীপথ খনন ও পুনরুদ্ধারে বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৬২টি নদী ও ৩১টি নৌপথ রয়েছে। বরিশাল বিভাগের নদীগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা হ্রাস, জলাভূমি পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধা বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় বরিশাল সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ধান-নদী-খাল তিনে মিলে বরিশাল। নদীগুলোর নাব্যতা হারানোয় বরিশালের এই ঐতিহ্য আজ ম্লান হতে বসেছে। একসময় সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। কারণ, এর পেছনে ব্যবসা আছে, লাভের ব্যাপার ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীপথের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। এ জন্য তিনি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে দেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি এবং দেশের পুরোনো, নাব্যতা হারানো নৌপথকে পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর অঙ্গীকার পূরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল অঞ্চলের নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপকারভোগীদের মতামত নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নৌপথের সঙ্গে এ দেশের মানুষের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। শিল্প-সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। কম খরচে, নিরাপদ ও আরামদায়ক যোগাযোগ, পণ্য পরিবহনে নৌপথের বিকল্প নেই। এ জন্য আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। নদীকে বাঁচাতে হবে আমাদের বেঁচে থাকার স্বার্থে, প্রাণ-প্রকৃতির স্বার্থে। নদীকে জীবন্ত সত্তা ফিরিয়ে দিতে দখল উচ্ছেদ, নাব্যতা ফিরিয়ে দিতে সরকার কাজ করছে। এ জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার অমিতাভ সরকার। সভায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদিক, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, কোস্টগার্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঘাঁটির কমান্ডার ক্যাপ্টেন মঞ্জুর হোসেন, খনন বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন।

মতবিনিময় সভায় বরিশালের লঞ্চমালিক, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বলা হয়, এই প্রকল্পের অধীনে বরিশাল অঞ্চলের নদীগুলোকে টেকসই ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক, কারিগরি ও পরিবেশগত আঙ্গিক বিবেচনায় নিয়ে সমীক্ষা এবং সেই লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করে নাব্যতাসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল বিভাগের ৬২টি নদীর মধ্যে এক–চতুর্থাংশের নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, নদীর নাব্যতা রক্ষায় বছর বছর নদীগুলো খনন করে বিপুল অর্থ ব্যয় করেও সুফল মিলছে না। এ জন্য টেকসই প্রকল্প দরকার। বিশেষ করে নাব্যতা ধরে রাখতে পরিকল্পিত খননের পাশাপাশি আরএস-সিএস ধরে নদীর সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ করতে হবে। নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোর উৎস ও পতনমুখের বাধা দূর করতে হবে। নদী দখলদারদের উচ্ছেদ না করে নদীকে রক্ষায় কোনো প্রকল্প কোনো কাজে আসবে না।

সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ বলেন, নদীকে তার আপন সত্তা ফিরিয়ে দিতে হলে প্রথমে কী কারণে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়, সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে।

বিআইডব্লিউটিএর পরামর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. হাসান সভায় বলেন, নদীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে জমি পুনরুদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিরসন এ দুটি বিষয় একসঙ্গে নিশ্চিত করতে হয়। আর নদী খননের পলি পুনর্ব্যবহারের বিষয়টি ভাবতে হবে। এ জন্য খননকৃত এসব পলি ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহারের বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।

সভায় কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, এই সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হলে দেশের নদ-নদী ও নৌ যোগাযোগে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে, যা হবে টেকসই ও যুগান্তকারী।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল বিভাগের ৬২টি নদীর মধ্যে এক–চতুর্থাংশের নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। এখন খনন করা হলে এসব নদ–নদীর নাব্যতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি নৌপথের সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবহার ও খুব কমমূল্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে কৃষি, সেচব্যবস্থার উন্নয়ন ও পর্যটন বৃদ্ধি পাবে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ফলে নৌপথ সচল হয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে ও পরিবেশ জলবায়ু কৃষি ও সেচব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এতে তিনটি নতুন লঞ্চঘাট, ৬০টি পুরোনো ঘাট উন্নয়ন, ১১টি কার্গো ঘাটের উন্নয়ন ও তিনটি পর্যটন ঘাট নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।