দখল–দূষণে এখন মৃতপ্রায়

পুকুরটি সুনামঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নে। ময়লা ফেলে ও ভরাট করে পুকুরটি দখল করা হয়েছে।

ধরমপাশার মধ্যনগর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন শতবর্ষী পুকুরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি।
প্রথম আলো

দখল ও দূষণে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের শতবর্ষী পুকুরটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় এবং ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করায় পুকুরটি এখন মৃতপ্রায়।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যনগর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় একটি শতবর্ষী পুকুর আছে। এর আয়তন ১ একর ৯৫ শতক। ১৯২০ সালে মধ্যনগর বিপি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দুই বছর আগে এই পুকুরের মাটি দিয়ে বিদ্যালয়ের ভিটি ও মধ্যনগর বাজারের ভিটি তৈরি করা হয়। একসময় এটি স্থানীয় ও আশপাশের মানুষের পানীয় জলের চাহিদা মেটাত। এই পুকুরটি প্রায় ২৫ বছর আগে মধ্যনগর বাজার পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর আর নতুন করে কোনো সংস্কার করা হয়নি। এ অবস্থায় পুকুরটি এখন এলাকাবাসীর ময়লা–আবর্জনা ফেলার ভাগাড় হিসেবে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় পুকুরটির প্রায় এক একর জায়গা দখল করে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬-এর ঙ ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে পুকুরটি রক্ষার জন্য মাইকিং করাসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না। ৭ জুলাই বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মধ্যনগর বাজারে মাইকিং করে পুকুরের মধ্যে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা ৯ জুলাইয়ের মধ্যে সরিয়ে নিতে বলা হয়। এই সময় নিজ উদ্যোগে সরিয়ে না নিলে ১১ জুলাই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। উপজেলার মধ্যনগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও মধ্যনগর বাজারের বাসিন্দা নৃপেন্দ্র চন্দ্র রায় (৭২) বলেন, ‘১৯২০ সালে মধ্যনগর বিপি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর তিন-চার বছর আগে এই পুকুর খনন করা হয়। যখন এলাকায় নলকূপ ছিল না, তখন এলাকার মানুষ এই পুকুরের পানি পান করত। আমি নিজেও ছোটবেলায় এই পুকুরের পানি খেয়েছি এবং সেখানে সাঁতারও কেটেছি।’

এ বিষয়ে ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান বলেন, প্রশাসন পুকুরটি দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বর্ষাকালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এ কারণে আর অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।