দখলমুক্ত হলো ১০ একরের বেশি জমি

স্থানীয়ভাবে এসব জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। উদ্ধার হওয়া জমিগুলোতে ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীর আমদিয়ায় ৪১৫ শতক সরকারি জমি ৩৬ বছর ধরে বেহাত ছিল। পাইকারচরে খাসজমি ও নদীর জায়গা একসঙ্গে দখল করে চলছিল পাওয়ারলুম। মহিষাশুড়ায় ১৩৩ শতাংশ খাসজমিতে সরকারি বিধি অমান্য করে তৈরি হয়েছিল অবৈধ ভবন।

চার-পাঁচবার হাতবদল হওয়া এসব সরকারি জমি থেকে এত বছর কোনো খাজনাও আদায় করা যায়নি, ছিল না কোনো সরকারি তদারকিও। গত এক মাসে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জমিগুলো দখলমুক্ত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

সদর উপজেলার ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দখলমুক্ত হওয়া মোট জমির পরিমাণ ১০ একরের বেশি (১ হাজার ৬৪ শতাংশ)। স্থানীয়ভাবে এসব জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ আলম মিয়া অভিযান চালিয়ে জমিগুলো দখলমুক্ত করার পর সাইনবোর্ড ও লাল নিশানা টাঙিয়ে দিয়েছেন। গত এক মাসে উপজেলার দুটি পৌর এলাকা ও ছয়টি ইউনিয়নে ১৪টি অভিযান চালিয়ে জমিগুলো দখলমুক্ত করা হয়।

ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে একসঙ্গে অন্তত ১০০ ভূমিহীন পরিবারের আবাসন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলাজুড়ে দখলে থাকা সরকারি জমির খোঁজ নেওয়া হয়। তখন দেখা যায়, প্রচুর সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলে আছে এবং সেগুলো থেকে সরকার কোনো খাজনা পাচ্ছে না। পরে সেগুলো দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার জমিগুলোতে ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

গত আগস্ট মাসের শুরুতে মাধবদীর বিরামপুর ও আমদিয়া ইউনিয়নের বনভাগ এলাকায় দুটি অভিযান চালিয়ে ৫৭২ শতাংশ জমি উদ্ধার করা হয়। এসব জমিতে অবৈধভাবে পুকুর করেছিলেন স্থানীয় লোকজন। এরপর পর্যায়ক্রমে পৌর এলাকার সাটিরপাড়ায় ৪৬ শতাংশ, মাধবদীর ছোট মাধবদী এলাকায় ৮, হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচর এলাকার ১০, মহিষাশুড়া ইউনিয়নের বালুশাইর, আটপাইকা ও মাধবদীর নওপাড়া এলাকার ১৬৮ শতাংশ জমি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া পাইকারচর ইউনিয়নের পুরানচর ও কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের ডৌকাদি এলাকায় ২৫ শতাংশ নাল জমি ও মাধবদীর নওপাড়া ও চিনিশপুরের ভেলানগরে অভিযান চালিয়ে ৫২ শতাংশ জমি উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট মেহেরপুর ইউনিয়নের হনুমন্তপুর এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া জমির পরিমাণ ৩২ শতাংশ। দখল হওয়া জমিগুলোতে এত দিন মাছ চাষ, মুরগির ফার্ম, সাবান ফ্যাক্টরি, পাওয়ারলুম ও বসতবাড়ি ছিল। তবে সদর উপজেলায় বর্তমানে কত শতাংশ জমি বেদখল আছে, তার কোনো হিসাব ভূমি অফিসের কাছে নেই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিটি ইউনিয়নেই সরকারি খাসজমি আছে, যা অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। তাঁদের কাছ থেকে ভূমি অফিসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সুবিধা নেন। এ কারণে দখল হওয়া জমির সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না।

জানতে চাইলে সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ আলম মিয়া জানান, দখলে থাকা জমি উদ্ধার করতে গিয়েও বিভিন্ন জায়গায় বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলাজুড়ে অবৈধভাবে দখলে থাকা ৮০ শতাংশ সরকারি জমি খুঁজে বের করে উদ্ধারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, উদ্ধার জমিগুলো মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও এমন উদ্ধার অভিযান চালানো হলে সরকারই লাভবান হবে।