দলবদ্ধ ধর্ষণের পর মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেহ ফেলা হয় ধানখেতে: র‍্যাব

হত্যা
প্রতীকী ছবি

খুলনার ফুলতলা উপজেলায় তরুণীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দুই যুবককে আটক করেছে র‌্যাব-৬। আজ শনিবার দুপুরের দিকে তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী যগ্নিপাশা এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের বাথরুমের মাটির নিচ থেকে ওই তরুণীর মাথা উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব বলছে—হত্যার আগে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন আটক দুই যুবক।

আটক দুই যুবক হলেন রিয়াজ ও সোহেল। তাঁদের বাড়ি যগ্নিপাশা এলাকায়। গতকাল শুক্রবার রাতে রিয়াজকে ফরিদপুর থেকে ও সোহেলকে ফুলতলা থেকে আটক করে র‌্যাব। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাথা উদ্ধার অভিযানে নামা হয়। এর আগে গত বুধবার তরুণীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর বোনের করা মামলায় রিয়াজের নাম উল্লেখ ছিল। কয়েক দিন ধরে রিয়াজ ওই তরুণীকে উত্যক্ত করতেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছিলেন বাদী।

মাথা উদ্ধারের পর র‌্যাব-৬–এর পরিচালক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ ঘটনাস্থলেই সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করেন। আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের তিন দিন আগে রিয়াজের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় হয়। এরপর তাঁরা দেখা করার জন্য মনস্থির করেন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে রিয়াজ ওই তরুণীকে ফোন করে যুগ্নিপাশা এলাকায় নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে সোহেলও ছিলেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, ওই বাড়িতে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন রিয়াজ ও সোহেল। একপর্যায়ে মেয়েটি বারবার আকুতি করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মেয়েটিকে ছেড়ে দিলে তাঁরা রক্ষা না–ও পেতে পারেন এমন আশঙ্কায় তাঁরা তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরপর তাঁরা মেয়েটিকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে একটি নির্জন বিলের মধ্যে নিয়ে যান। সেখানে আবার মেয়েটির সঙ্গে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। পরে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য লাশটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন ওই দুজন। তাতেও ব্যর্থ হলে লাশটি বিলের মধ্যে ফেলে দেন। লাশের পরিচয় শনাক্ত হলে তাঁরা ধরা পড়ে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকে সোহেল বাড়ি থেকে বটি নিয়ে এসে মেয়েটির গলা কেটে ও পরনের কাপড়চোপড় নিয়ে তাঁদের বাড়ির পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনের বাথরুমের মাটির নিচে পুঁতে রেখে যে যাঁর বাড়ি চলে যান।

গত বুধবার সকালের দিকে ফুলতলা উপজেলার উত্তরডিহি এলাকার একটি ধানখেত থেকে মাথাবিহীন তরুণীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধানখেতে লাশটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। প্রথমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে লাশটি উদ্ধার করা হলেও দুপুরের দিকে নিহতের দুই বোন লাশের হাত-পা দেখে ওই তরুণীর বলে শনাক্ত করেন। ওই দিন রাতে তাঁর বড় বোন বাদী হয়ে ফুলতলা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস তালুকদার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, র‌্যাবের অভিযানের পর আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তখনো দুই আসামিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

নিহত তরুণীর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায়। তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। সাত বছর ধরে তাঁরা ফুলতলা উপজেলার একটি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তরুণী একটি জুটমিলে শ্রমিকের কাজ করতেন।

আরও পড়ুন