দশমিনায় বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ১১ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

ঘুর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। বাঁধের এসব অংশ দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে ১১ টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। মঙ্গলবার পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বুড়িকান্দা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রণগোপালদি ইউনিয়ন এলাকার বাঁধের কয়েকটি অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় বাঁধের এসব ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ১১টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ঘরের উঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকে। এতে এসব গ্রামের সাত শতাধিক পরিবার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢোকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দশমিনা উপজেলার রণগোপালদি ইউনিয়নের বুড়িকান্দা গ্রামের গৃহবধূ রুমা বেগম। কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় বাঁধ ভেঙে নদীর পানিতে ঘরের মালামাল ভেসে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এখন নেই। কিন্তু জোয়ারের পানি এখনো গ্রামে ঢুকছে। খাওয়ার পানি আনতে জোয়ারের পানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অন্যান্য কাজের জন্যও জোয়ারের পানি ভেঙে চলাচল করতে হয়। এখন জোয়ারের পানির কারণে তাঁদের কষ্ট করতে হচ্ছে।

রুমা বেগমের বাড়ি থেকে একটু দূরে তেঁতুলিয়া শাখা নদীর বাঁধের ওপর সড়ক। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে বাঁধের কয়েকটি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এখন জোয়ারের সময় পানি বাঁধের ভেঙে যাওয়া ২০টি স্থান দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। জোয়ারের সময় রণগোপালদি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।  
বুড়িকান্দা গ্রামের ফকির বাড়ির সালমা বেগম (৪০) জানান, তাঁদের বাড়ির চারদিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি আনতেও পানি ভেঙে পাশের বিদ্যালয়ের নলকূপে যেতে হয়। পানিতে ঘরের ভিটাও ধুয়ে যাচ্ছে।

ঘুর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। বাঁধের এসব অংশ দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে ১১ টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। মঙ্গলবার পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বুড়িকান্দা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, তেঁতুলিয়া শাখা নদীর পানির চাপে উপজেলার বুড়িকান্দা এলাকার বাঁধে আগেই ভাঙন দেখা দিয়েছিল।  ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে এই বাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে জোয়ারের পানি রণগোপালদি ইউনিয়নের রণগোপালদি, উত্তর রণগোপালদি, খলিশাখালী, গোলবুনিয়া, যৌতা, রণগোপালদি বাজার, আউলিয়াপুর, পাতারচর, চরঘূর্ণিসহ ১১টি গ্রামে ঢুকছে।

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, রণগোপালদি ও আলীপুরা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া শাখা নদীর পারের কৃষকের ফসল রক্ষাসহ দুর্যোগ–প্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষায় নব্বইয়ের দশকে পাউবো ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করেছিল। এরপর থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাঁধটি রক্ষাবেক্ষণ করছে।

এলজিইডি দশমিনা উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে এলজিইডির ‘দক্ষিণ-পশ্চিম প্রকল্প’ আওতায় দশমিনা উপজেলা সদর থেকে আলীপুরা ইউনিয়ন হয়ে রণগোপালদি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় পর্যন্ত ৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার বাঁধের ওপর উপজেলা ও ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে ৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। পরে বুড়িকান্দা এলাকায় বাঁধের ৬৫ মিটার নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়।

এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন বলেন, এলজিইডি পাউবোর বাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণ করেছিল। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধ মেরামত কিংবা নতুন করে নির্মাণ করার পর এলজিইডি বাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করবে।

এ বিষয়ে পাউবো পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে দশমিনার রণগোপালদি ইউনিয়নের বুড়িকান্দা গ্রামের বাঁধের কয়েকটি স্থানের কমপক্ষে ৩০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আশা করছি চলতি বছরই এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারের সময় সরেজমিন দেখা যায়, রণগোপালদি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের নিচু এলাকা ডুবে আছে। আমন বীজতলার সময় চলে আসছে। এভাবে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকলে কীভাবে বীজতলা করবেন, তা নিয়ে বেশ চিন্তিত গ্রামগুলোর কৃষকেরা।

বুড়িকান্দা গ্রামের আলতাফ ফকির বলেন, তাঁদের গ্রাম থেকে ইউপি কার্যালয়ে বাঁধের ওপরের ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসে সড়ক ধসে যাওয়ায় তাঁরা এখন ইউপি কার্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। হাটবাজার কিংবা ইউপিতে যেতে হলে পানি ভেঙে কষ্ট করে যেতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে রণগোপালদি ইউপির চেয়ারম্যান এ টি এম আসাদুল হক বলেন, ‘উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়ন হয়ে দশমিনা উপজেলা সদরে যাতায়াতে সহজ পথ বাঁধের ওপরের এই সড়ক। রণগোপালদি ইউনিয়নের ছয় গ্রাম ও আলীপুরা ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা এই পথ দিয়ে আউলিয়াপুর ও গলাচিপা কলেজে যাতায়াত করছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে তাঁদের এলাকার বাঁধ ভেঙেছে, সড়কও ভেসে গেছে। এই অবস্থায় ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে অন্তত তিন কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। শিগগিরই বাঁধের ভাঙা অংশ সংস্কার করা দরকার।