দাউদকান্দিতে আলুর বাজারে ধস, কেজি ৭–৮ টাকা

হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বের করে পচা আলু বাছাই করছেন শ্রমিকেরা। সোমবার সকালে কুমিল্লার গৌরীপুরের পেন্নাই কোল্ড স্টোরেজে
ছবি: আবদুর রহমান ঢাল

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় আলুর বাজারে ধস নেমেছে। আলুর দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন হিমাগারে আলু মজুত করা কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭-৮ টাকায়। গত বছর পাইকারি বিক্রি হয়েছিল ২০ টাকা কেজি দরে।

অন্যান্য বছর দাউদকান্দিতে নভেম্বর মাসের শুরু থেকে হিমাগারে মজুত করা আলু বাজারে বিক্রি করে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হতেন। এ বছর চাহিদার তুলনায় বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় ও সংরক্ষণ করায় আলুর বাজার পড়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

উপজেলার কাদিয়ারভাঙা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, চলতি বছর তিনি মাল্টা ও ডায়মন্ড জাতের ৫৫ কেজির ৫০ হাজার বস্তা আলু নৈয়ার সরকার আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে রেখেছেন। ৫৫ কেজির প্রতি বস্তা আলু হিমাগারের ভাড়াসহ রাখতে খরচ হয়েছে ৯৯০ টাকা। বর্তমান বাজারে বিক্রি করতে পারছেন ৩৮৫ থেকে ৪০০ টাকা। প্রতি ৫৫ কেজির বস্তায় লোকসান হচ্ছে ৫৯০ থেকে ৬০৫ টাকা।

একই হিমগারে নৈয়ার গ্রামের ব্যবসায়ী রফিক মিয়া ৬০০ বস্তা, আঞ্জু বেগম ১১৩, বীরবাগ গোয়ালী গ্রামের ইব্রাহিম ব্যাপারী ১২০০, নোয়াদ্দা গ্রামের শফিকুল ইসলাম ২৩৫, তিনপাড়া গ্রামের মেস্তাক সরকার চার হাজার বস্তা, কুমিল্লা ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড হিমাগারে পেন্নাই গ্রামের দ্বীন ইসলাম ৯৯ হাজার বস্তা আলু রেখেছেন। বাজারে আলুর দাম না থাকায় প্রত্যেকেই এখন মোটা অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কাদিয়ারভাঙা গ্রামের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, গত বছর পাইকারি বাজারের আলুর দাম ছিল ২০ টাকা কেজি। আর খুচরা বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। ফলে গত বছর বেশ লাভ হয়েছিল। এ বছর বাজার খারাপ।

নৈয়ার গ্রামের ব্যবসায়ী মনির মিয়াজী, নোয়াদ্দা গ্রামের ব্যবসায়ী নবীর হোসেন ব্যাপারী, বীরবাগ গোয়ালী গ্রামের ব্যবসায়ী মোস্তাক মিয়া জানান, চলতি বছর আলু খেত থেকে তোলার পর যেসব কৃষক আলু বিক্রি করেছেন, তাঁরাই লাভবান হয়েছেন। যাঁরা আলু মজুত রেখেছেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর ফলন ভালো হওয়ার কারণে চাহিদার তুলনায় বেশি আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করায়, করোনাকালে বিধিনিষেধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কওমি মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল ও হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় এবং বিদেশে রপ্তানি করতে না পারায় হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কুমিল্লা ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম বলেন, তাঁদের হিমাগারে ১ লাখ ৮০ হাজার বস্তা আলু রাখার ব্যবস্থা আছে। চলতি বছর আলুর দাম কমে যাওয়ায় হিমাগারের মালিকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলুর দাম বর্তমানের চেয়ে আরও কমে গেলে অনেক ব্যবসায়ী হিমাগারের ভাড়া দিয়ে আলু উত্তোলন করবেন না। তখন হিমগারের মালিকেরা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সরকার আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজের অফিস সহকারী খোকন খন্দকার বলেন, চলতি বছর আলুর দাম কম হওয়ায় হিমাগারের মালিকেরাও চিন্তিত। অনেক ব্যবসায়ী সময়মতো আলু বের করছেন না। এতে বিদ্যুৎ বিলের হিসাবে হিমাগারের মালিকেরা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, দাউদকান্দিতে গত বছর ৫ হাজার ১৮৫ হেক্টর, এর আগের বছর ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। ফলন ভালো, আবাদ বেশি এবং করোনায় বিধিনিষেধের কারণে আলুর দাম কমে গেছে। এতে আলু ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।