দাওয়াত পেতে পোস্টারিং, অতঃপর...

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় দাওয়াত পেতে গাছে গাছে পোস্টার লাগিয়ে ফোন কলের বিড়ম্বনায় পড়েছেন গিয়াস উদ্দীন নামের এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী
প্রথম আলো

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় দাওয়াত পেতে গাছে গাছে পোস্টারিং করে ফোন কলের বিড়ম্বনায় পড়েছেন গিয়াস উদ্দীন (৩১) নামে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি।

‘এখন থেকে ফকির দাওয়াত, কুলখানি ও দোয়া কালামের জন্য ফকিরের প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করুন’—এমন কথা লিখে নাম ও ফোন নম্বরসহ গাছে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছেন গিয়াস উদ্দীন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে এটি ছড়িয়ে পড়লে তাঁর মুঠোফোনে কলের পর কল আসতে শুরু করে।

গিয়াস উদ্দীনের অভিযোগ, বিনা প্রয়োজনে মানুষ ফোন করে দাওয়াতের কথা বলে তাঁকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। ফোন নিয়ে তিনি এখন চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। জীবিকার প্রয়োজনে এমন পোস্টারিং করে বিড়ম্বনায় পড়ার কথা তিনি ভাবতে পারেননি। তিনি এখন সব পোস্টার খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন। তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের মাগুরমারী এলাকার বাসিন্দা।

গিয়াস উদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে গিয়াস সবার বড়। ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট ভাই বিয়ের পর আলাদা সংসার করছেন। চার বছর বয়সে টাইফয়েডে গিয়াসের দুটি চোখের আলো নিভে যায়। বাবার মৃত্যুর পর মামার দেওয়া আড়াই শতক জমিতে টিনের চালা ঘর তুলে বসবাস করছেন তিনি। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। প্রতিদিন বিভিন্ন বাজারে ভিক্ষা করে সংসার চালান তিনি। সেই সঙ্গে কারও মৃত্যু হলে ফকিরের দাওয়াত ও কুলখানির জন্য ভাড়া হিসেবে যান তিনি। এই দাওয়াত পাওয়া সহজ করতে তিনি নিজের বুদ্ধিতে এমন পোস্টারিং করেছিলেন। গিয়াসের দাবি, তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করেন না। সারা দিন বিভিন্ন বাজারে ঘুরে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। এই টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়া উপজেলার মোট ১২৭ জন ভিক্ষুককে নগদ টাকা, ছাগল ও ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিতরণ করে উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে উপজেলায় নতুন করে আরও ৩৩ জন ভিক্ষুকের তালিকা করা হয়। পর্যায়ক্রমে তাদেরও পুনর্বাসন করা হবে।

আগের ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় গিয়াস উদ্দীনকে একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান দেওয়া প্রস্তাব এসেছিল বলে তিনি দাবি করেন। তবে চোখে না দেখতে পাওয়ায় এই দোকান চালাতে পারবেন না বলে তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন। তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পান।

গিয়াসের প্রতিবেশী রমিজুল ইসলাম বলেন, গিয়াস পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে জীবনযাপন করেন। প্রথম দিকে তাঁর লাগানো পোস্টার বেশ কাজে দিয়েছিল। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তিনি বিড়ম্বনায় পড়েন। মানুষ বিনা কারণে তাঁকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গিয়াস উদ্দীনের খোঁজখবর নিয়ে তাঁর জন্য কী করলে উপকার হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।