দাম কমায় বেড়েছে কোরবানি, তবে লোকসানে খামারি

এবার হাটে গরু উঠছিল অনেক। তবে ক্রেতা কম। তাই কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি খামারি ও গৃহস্থরা। ২৮ জুলাই পাবনার বেড়া পৌরসভার করমজা পশুর হাটে। ছবি: প্রথম আলো
এবার হাটে গরু উঠছিল অনেক। তবে ক্রেতা কম। তাই কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি খামারি ও গৃহস্থরা। ২৮ জুলাই পাবনার বেড়া পৌরসভার করমজা পশুর হাটে। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি। দুয়ে মিলে পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়ায় এবার পশু কোরবানি বেশ কম হবে বলেই ধারণা ছিল। তবে ঈদুল আজহা যত এগিয়ে এসেছে, গরুর দাম ততই কমেছে। এর প্রভাবে পশুর হাটগুলোতে শেষ মুহূর্তে প্রচুর বেচাকেনা হয়েছে। গতবারের প্রায় কাছাকাছি পশু কোরবানি হয়েছে এবার। তবে ভালো দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে খামারিদের।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা দেশের অন্যতম গরু পালনকারী এলাকা। কোরবানি সামনে রেখে খামারি ও কৃষকেরা প্রতিবছর প্রচুর গরু পালন করে থাকেন। এবার কোরবানি উপলক্ষে বেড়ায় ৩০ হাজারের কিছু বেশি ও সাঁথিয়ায় প্রায় ৪১ হাজার গবাদিপশু পালন করা হয়েছিল। এর মধ্যে বেড়ায় ১৩ হাজার ও সাঁথিয়ায় ২৫ হাজার গরু ছিল। বাকিটা ছিল মহিষ, ভেড়া ও ছাগল।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে কোরবানির হাটের অন্তত দুই মাস আগে থেকে ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনেন। কিন্তু করোনার কারণে এবার দূরদূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা বেড়া-সাঁথিয়ার কোনো বাড়িতে গরু কিনতে আসেননি। এ জন্য কোরবানির হাট নিয়ে আগে থেকেই আতঙ্কে ছিলেন গরু পালনকারীরা।

ঈদের সপ্তাহ দু-এক আগে থেকে শুরু হয় পশুর হাট। কিন্তু ওই সময় পশু বিক্রি কম হয়েছে। খামারিরা গরু বিক্রি করতে না পেরে এ হাট থেকে ও হাটে ছোটাছুটি করেছেন। ক্রেতার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় গরুর দাম হাটে হাটে কমেছে। বেশির ভাগ গরু পালনকারীর মাথায় ঋণের বোঝা থাকায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা বাধ্য হয়ে লোকসানেই গরু ছেড়ে দিয়েছেন।

গরু ব্যবসায়ীরা জানান, সবচেয়ে কম দামে গরু বিক্রি শুরু হয় পবিত্র ঈদুল আজহার দুই-তিন দিন আগে থেকে। সে সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় শতকরা ৬০ ভাগ দামে এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্ধেকের কাছাকাছি দামেও গরু বিক্রি হয়েছে। কম দামে গরু বিক্রি হওয়ায় ওই সময়ে গরু কেনার ইচ্ছা না থাকা লোকজনও হাটে গিয়ে গরু কিনেছেন। এর ফলে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে এবার বেশিসংখ্যক পশু কোরবানি হচ্ছে।

বেড়া কৃষি ক্লাবের সভাপতি এম আর এম ফিরোজ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবীরা অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থায় আছে। কিন্তু কৃষক ও সরকারি চাকরিজীবীরা সেই তুলনায় ভালো আছেন। বিশেষ করে এবার কৃষকেরা পেঁয়াজের পরে ধানে ভালো দাম পেয়েছেন। ফলে তাঁরা আগে থেকেই কোরবানির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। এরই মধ্যে আবার দাম কমে যাওয়ার সুযোগে শুধু কৃষক নন, অন্যদের মধ্যেও কোরবানির পশু কেনার আগ্রহ বেড়েছে। তবে এবার গরু পালনকারীরা চরম লোকসান দিয়েছেন।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, কৃষক ও চাকরিজীবীদের মধ্যে এবার পশু কোরবানি বাড়লেও অন্য বেশ কিছু পেশাজীবীর ক্ষেত্রে তা কমছে। বেড়া পৌর এলাকার মৈত্রবাঁধা মহল্লার একটি পরিবারের প্রধান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁর দুই ছেলে দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। গত কয়েক বছর ছেলেদের পাঠানো টাকায় কোরবানি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার করোনার কারণে ছেলেদের অর্থনৈতিক সমস্যা হওয়ায় কোরবানি দেওয়া হচ্ছে না। এই পরিবারটির মতো বেড়া উপজেলার অনেক প্রবাসীর পরিবারে এবার একই অবস্থা বলে জানা গেছে।

বেড়া উপজেলার অনেক স্থানেই সমাজভিত্তিক পশু কোরবানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার সমাজটি উপজেলার বেশ বড় একটি সমাজ। এই সমাজের অন্যতম প্রধান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গতবার আমাদের সমাজে ৩৪টি গরু কোরবানি হয়েছিল। কিন্তু এবার কোরবানি হচ্ছে ২৩টি। আমাদের সমাজে কৃষকের তুলনায় ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ অন্যান্য পেশার লোকজন বেশি। তাই মূলত অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমাদের সমাজে এবার পশু কোরবানি কমেছে।’

বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরচন্দ্র সাহা বলেন, উপজেলায় কোরবানির পশুর সংখ্যা ৩০ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে স্থানীয় হাটগুলোতে ১৯ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। বাকি ১১ হাজার উপজেলার বাইরের হাটগুলোতে বিক্রি হয়েছে কি না, পরে তা জানা যাবে। তবে এবার যতটুকু খবর পেয়েছেন তাতে এ উপজেলায় গতবারের প্রায় সমান পশুই কোরবানি হচ্ছে।

সাঁথিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ বলেন, এই উপজেলায় ৪১ হাজার কোরবানির পশুর প্রায় সবই বিক্রি হয়েছে। যত দূর জেনেছেন, এবার এ উপজেলায় সংখ্যার হিসাবে গতবারের মতোই পশু কোরবানি হচ্ছে।