দিনভর অপেক্ষার পর ভারতে আটকে পড়া ১১ জন দেশে ফিরেছেন

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দর
প্রথম আলো

দিনভর অপেক্ষার পর অবশেষে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩ নারীসহ ১১ জন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দর হয়ে দেশে ফিরেছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁরা ভারতের গেদে থেকে বাংলাদেশের দর্শনা স্থলবন্দরে প্রবেশ করেন। বন্দরে পৌঁছানোর পর তাঁদের করোনা পরীক্ষা এবং বিজিবি, অভিবাসন, শুল্ক বিভাগের দাপ্তরিক কাজসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা চলে।

দর্শনা বন্দরে প্রবেশের পর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা এবং পর্যায়ক্রমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশের অভিবাসন শাখা (ইমিগ্রেশন) ও শুল্ক বিভাগের (কাস্টমস) আনুষ্ঠানিকতা শেষে মাইক্রোবাসে চুয়াডাঙ্গার ভিরুল্লাহ এলাকায় অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) অবস্থিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নেওয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানেরই ডরমিটরিতে চালু করা কোয়ারেন্টিন সেন্টারে তাঁদের পরবর্তী ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল রোববার থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনাসহ দেশের তিনটি স্থলবন্দর খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দিন অন্য দুটি বন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা দেশে প্রবেশ করলেও কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) না পাওয়ায় দর্শনা বন্দর দিয়ে একজনও প্রবেশ করতে পারেননি।

চুয়াডাঙ্গার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। দর্শনা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসা বাংলাদেশিদের এখন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টার এটি
প্রথম আলো

এনওসি জটিলতায় ১৬ মে দর্শনা বন্দর দিয়ে একজনও না আসায় আজ সকাল থেকেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, আজও এই বন্দর দিয়ে কেউ প্রবেশ করছেন না। দর্শনা বন্দর থেকে ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর জেলার গেদে চেকপোস্টে কর্মরত ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও দুপুর পর্যন্ত তারাও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার, পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলামসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা দুপুরে বন্দর পরিদর্শন করেন। ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের গ্রহণ করতে সার্বিক প্রস্তুতি দেখে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) আবু রাসেল, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলারা রহমান, ইমিগ্রেশন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আলিম কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেন।

ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফেরাতে চুয়াডাঙ্গার দর্শনাসহ দেশের তিনটি স্থলবন্দর ১৬ মে খুলে দেওয়া হয়েছে। দর্শনা স্থলবন্দরের সার্বিক পরিবেশ দেখতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ জেলার শীর্ষ কর্মকর্তারা সোমবার দুপরে সরেজমিন পরিদর্শন করেন
প্রথম আলো

স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে স্থলবন্দর দিয়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাত্রীদের যাওয়া-আসার সুযোগ আছে। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ইমিগ্রেশন পুলিশের সদর দপ্তর থেকে সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত যাত্রী প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। সে হিসেবে আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত একজনও বাংলাদেশি প্রবেশ না করায় কর্মকর্তারা সরাসরি জানিয়েও দেন, আজও কেউ আসছেন না।

এদিকে বেলা তিনটার দিকে দর্শনা বন্দরের অভিবাসন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আলিম নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারেন যে গেদে চেকপোস্টে কয়েকজন বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। বাংলাদেশি উপহাইকমিশনের অনাপত্তিপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজ থাকার পরও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সীমান্তপথ খুলে না দেওয়ায় কেউ আসতে পারছেন না।

বিষয়টি জানার পর পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম গেদেতে অপেক্ষমাণ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে ৬ বিজিবির পরিচালক মো. খালেকুজ্জামানের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিজিবি-বিএসএফ আলোচনার পর গেদেতে অবস্থানকারী ৩ নারীসহ ১১ জন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দর্শনা বন্দর হয়ে প্রবেশ করেন।

জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, গতকাল ভারতের কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপহাইকমিশন থেকে মোট ৫১ জনের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ইস্যু করেছে। তাঁদের মধ্যে ১১ জন দেশে ফিরেছেন। বাকিরা কাল মঙ্গলবার ফিরতে পারেন।