দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে বেড়েছে পাসের হার, এগিয়ে মেয়েরা

ফলাফল শোনার পর শিক্ষার্থীদের বাধভাঙা উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার দিনাজপুর শহরের হলিল্যান্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজেছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পাসের হার হয়েছে। একইভাবে বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এবার পাসের হারসহ জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়েছে মেয়েরা।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তোফাজ্জুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের উপসচিব আবদুর রাজ্জাক, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মানিক হোসেন, উপবিদ্যালয় পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছর এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। পাসের হার বাড়ার বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, করোনা মহামারিতে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐচ্ছিক বিষয়সহ মোট চারটি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর জেএসসির ফলাফল যুক্ত হয়েছে। তা ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী সাধারণত গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে ফলাফল খারাপ করে। এবার সে বিষয়গুলোর পরীক্ষা না হওয়ায় পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

দিনাজপুর বোর্ডে এবার পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছর এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, এবার সাধারণত গণিত ও ইংরেজি বিষয়েের পরীক্ষা না হওয়ায় পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

এবার অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৮১১ জন। গত বছর যেখানে অনুপস্থিত ছিল ১ হাজার ১৫৮ জন। অনুপস্থিতির হার বেশি হওয়ার বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, অসুস্থতার কারণে কিংবা অনেক শিক্ষার্থী ঢাকায় পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজে যুক্ত হয়েছে। করোনাকালীন দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকাও অনুপস্থিতির একটা কারণ।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবার ২ হাজার ৬৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪১২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬২ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। ফেল করেছে ১০ হাজার ৫০ জন। ২০২০ সালে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৮৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ছিল ৮৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

ফলাফল ভালো হয়েছে। এখন মিষ্টিমুখের পালা। বৃহস্পতিবার দিনাজপুর শহরের হলিল্যান্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজে
ছবি: প্রথম আলো

পাসের হার বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ হাজার ৫৭৮ জন, যেখানে গত বছর ১২ হাজার ৮৬ জন, ২০১৯ সালে ৯ হাজার ২৩ জন, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ৭৫৫ জন, ২০১৭ সালে ৬ হাজার ৯২৯ জন, ২০১৬ সালে ৮ হাজার ৮৯৯ জন এবং ২০১৫ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০ হাজার ৮৪২ জন। তবে গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে মেয়েরা। এবার জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ৮ হাজার ৯০৬। জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রসংখ্যা ৮ হাজার ৬৭২।

এবার করোনা পরিস্থিতিতে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, পৌরনীতি ও নাগরিকতা এবং অর্থনীতি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত বিষয়ে এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, এবার মানবিক বিভাগে ১ লাখ ৯ হাজার ২৭৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ২ হাজার ৮৯ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে ৭৯ হাজার ৭০৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭৭ হাজার ৭৬ জন। পাসের হার ৯৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪ হাজার ৪২৭ জনের মধ্যে পাস করেছে ৪ হাজার ১১৯ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৯০ জন, মানবিক বিভাগে ৫৭৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ১০৯ জন।

ভালো ফলাফলের আনন্দ শিক্ষার্থীদের সেলফিতে উদযাপন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিনাজপুর শহরের চেহেলগাজী শিক্ষা নিকেতনে
ছবি: প্রথম আলো

পাসের হারে এগিয়েছে লালমনিরহাট

এ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার ২ হাজার ৬৭৬টি স্কুলের পরীক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এর মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে আছে লালমনিরহাট জেলা। এ জেলায় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০২০ সালে প্রথম স্থানে ছিল দিনাজপুর জেলা। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ নিয়ে দিনাজপুর জেলা এবার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ নিয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলা।