দিনাজপুরে কালোজামের জুস

পাল্প এক্সট্রাক্টর মেশিনের মাধ্যমে কালোজাম থেকে পাল্প (মণ্ড) ও বীজ আলাদা করা হচ্ছে। সম্প্রতি দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অসংখ্য কালোজামের গাছ আছে। প্রতি মৌসুমে এই ফল পেকে মাটিতে পড়ে চারদিক বেগুনি হয়ে থাকে। অথচ সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন এই ফল মানুষ ঠিকভাবে খেতে পারে না। এ অবস্থা দেখে কালোজামের জুস তৈরির চিন্তা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক মারুফ আহমেদ। প্রায় দেড় বছরের গবেষণা শেষে কালোজামের জুসের বাণিজ্যিক উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মারুফ আহমেদ বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের এপ্রিলে বাজারে আসবে কালোজামের জুস। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় কালোজাম নিয়ে গবেষণা করে এর ঔষধি গুণ ও জুস তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রযুক্তি এবং গ্রামীণশিল্প বিভাগের অধ্যাপক গুলজারুল আজীজ জানান, তাঁর বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী কিছুদিন আগে জাম থেকে জেলি তৈরি করেছিলেন। তবে কালোজাম থেকে চাইলে জুস তৈরি সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

মারুফ আহমেদ জানান, কালোজাম থেকে জুস তৈরির মূল সমস্যা হলো জুসের গুণাগুণ রক্ষা করা এবং পাল্প (মণ্ড) ও বীজ আলাদা করা। এটি অনেক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজ। প্রথমে সাধারণভাবে হাতেই পাল্প ছাড়ানোর কাজটি করলেও স্বাস্থ্যসম্মত ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের কথা বিবেচনা করে তিনি গবেষণাকর্ম সাময়িক বন্ধ রাখেন। এরপর তিনি কালোজাম থেকে পাল্প ছাড়ানোর মেশিন তৈরির কাজে হাত দেন। স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপকে পাল্প ছাড়ানোর মেশিনের নকশা দেন তিনি। সে অনুযায়ী ওয়ার্কশপের সহায়তায় তৈরি হয় ‘পাল্প এক্সট্রাক্টর’ মেশিন। এই মেশিনে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪০ কেজি কালোজামের পাল্প ছাড়ানো যায়।

জুস তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে মারুফ আহমেদ বলেন, বীজ থেকে পাল্প ছাড়ানোর পরেই সেগুলোকে গ্রাইন্ডিং (চূর্ণ) করা হয়। পরে সেই চূর্ণ করা পাল্পের সঙ্গে প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে ঠান্ডা করা হয়। মিশ্রণটি ঠান্ডা হলেই বোতলজাত করে বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে ওঠে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে দিনাজপুরের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান অন্বেষা সরকার অ্যান্ড চৌধুরী ফুড প্রোডাক্টসের মাধ্যমে কালোজামের জুস বাজারজাত করার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই কালোজামের জুস ভোক্তাদের হাতে পৌঁছাবে। বাণিজ্যিকভাবে দেশে এটিই প্রথম জামের জুস তৈরির উদ্যোগ বলে জানান তিনি।

মারুফ আহমেদ বলেন, করোনাকালে একাডেমিক চাপ কম থাকায় গবেষণাকর্মটি সময় হাতে রেখেই শেষ করা গেছে। বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সবুজ মাহমুদ, সুব্রত পণ্ডিত, রাশিদুর রহমানকে নিয়ে তিনি গবেষণাটি করেছেন।

কালোজামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মারুফ আহমেদ জানান, কালোজামে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি। কালোজামে থাকা পলিফেনলস উপাদান শরীরে ক্যানসার প্রতিরোধ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। এর বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করে।