দিনাজপুরে টিকা গ্রহণে আগ্রহ বেড়েছে মানুষের, বেশির ভাগ নারী

নিবন্ধন কার্ড হাতে নিয়ে টিকা নেওয়ার অপেক্ষায় নারীরা দাঁড়িয়ে আছেন বুথে। রোববার সকালে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে
প্রথম আলো

দিনাজপুরে ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ১৪টি স্থানে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। এবার টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। কিছুদিন পূর্বেও করোনার টিকা নেওয়ার বিষয়ে এ জেলার মানুষের উদাসীনতা ছিল। ছিল টিকা গ্রহণে ভীতিও। কিন্তু গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে করোনার ভীতি তৈরি হয়েছে। তাই টিকা নিতে নিবন্ধনকারীর সংখ্যাও বেশি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই আবার নারী।

আজ সোমবার সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে দেখা যায়, নিবন্ধন কার্ড হাতে দীর্ঘ লাইনে নারী-পুরুষদের অপেক্ষা। টিকা নিতে পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দুই শতাধিক নারী-পুরুষ। তাঁরা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনুযোগ জানান। পুরুষ বুথে ১০ জন করে অপেক্ষমাণ থাকলেও নারীদের বুথে তিল ধারণের জায়গা নেই। এ সময় সদরের বালুবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান (৬৩) বলেন, ‘আগে ভয় লাগত। তবে পরে যখন টিকা নিতে সাহস করলাম, তখন টিকা শেষ। এবার চালু হতেই দ্রুত নিবন্ধন করেছি।’ তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। সিরিয়াল পাননি। যে যাঁর মতো আসছেন, টিকা নিচ্ছেন। কোনো শৃঙ্খলা নেই।

স্বামীর সঙ্গে টিকা নিতে এসেছেন গুড়গোলা এলাকার শাকিলা বেগম (৩৮)। তিনি বলেন, ‘আগে তো গায়ে লাগাইনি। এই কয় দিনে দেখলাম অনেকেই টিকা নিয়েছেন, তাঁদের কোনো সমস্যা হয়নি। এখন ভয় কেটে গেছে। তাঁরা যেহেতু টিকা নিয়ে ভালো আছেন, আমরা কেন বাদ যাব। তাই স্বামীসহ নিবন্ধন করেছি।’

সবার হাতে টিকা নিবন্ধনের কার্ড। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে ঢুকে পড়েছেন টিকার বুথে। রোববার সকালে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরের নার্সিং ইনস্টিটিউটে
প্রথম আলো

টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্স ইউসুফ আলী বলেন, চীনের টিকা আসার পরে মানুষের যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমে দুটি বুথ করলেও বর্তমানে চারটি বুথে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। টিকা গ্রহণে নারীদের আগ্রহই বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজ করছেন। গতকাল বাঁশ দিয়ে ঘেরা দেওয়া হয়েছে। তাঁরাও দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়ানোর কথা বলছেন। অনেক সময় মানুষ কথা শুনতে চান না।

আজ শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের বাহাদুর বাজার, চারুবাবুর মোড়, কাছারি রেল গুমটি এলাকায় কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে মানুষের ভিড়। ভোটার আইডি কার্ড হাতে তাঁরা টিকা নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাহাদুর বাজারে কম্পিউটার কম্পোজার বাবু হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে বেশি মানুষ আসছেন। দৈনিক ৪০ জনের বেশি মানুষকে নিবন্ধন করাচ্ছেন তিনি। তবে ইন্টারনেট স্পিড সমস্যার কারণে নিবন্ধন কার্যক্রমে সময় বেশি লাগছে।ইনস্টিটিউটে

টিকা নিতে আসা পুরুষদের দীর্ঘ লাইন। রোববার সকালে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরের নার্সিং ইনস্টিটিউটে
প্রথম আলো

প্রতিদিন নিবন্ধন করছেন ২ হাজারের বেশি

জেলায় টিকা কার্যক্রমের শুরুতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘কোভিশিল্ড’ (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা) টিকার ৯৬ হাজার ডোজ আসে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি টিকাদান কার্যক্রম প্রথম শুরু হয়। কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭০ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৮৩০ জন। সেরামের কোভিশিল্ড টিকা সরবরাহ না থাকায় ৩২ হাজার ৮৬৭ জন এখনো দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৮ জুন টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের টিকা পাওয়া সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। তবে ৬ জুলাই থেকে গণনিবন্ধন ও টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলে ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে নারী-পুরুষ নিবন্ধন শুরু করেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ এজাজ বলেন, জেলায় ৬ জুলাই আবারও টিকার গণনিবন্ধন শুরু হয়। আজকের দিন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪৭ জন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী। প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ নিবন্ধন করছেন। গত ১ সপ্তাহে টিকা নিয়েছেন ৪ হাজার ৮৩৬ জন। তবে আজ সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সময়েই আড়াই হাজারের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন।

জেলা সিভিল সার্জন আবদুল কুদ্দুস বলেন, সেরামের টিকার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। টিকা পাওয়া সাপেক্ষে তাঁদের টিকা দেওয়া হবে। কেউ প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা নিয়েছেন, তাঁর দ্বিতীয় ডোজও সেই কোম্পানিরই হওয়া উচিত। তবে ভীতির কোনো কারণ নেই, দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে দেরি হলেও শারীরিক কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর শরীরে অন্তত ৪০ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।