দিনাজপুরে লকডাউনে তৎপর প্রশাসন, বাইরে বের হয়ে মানুষের নানা অজুহাত
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে দিনাজপুর সদর উপজেলায় শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। সকাল থেকে শহরের পাঁচটি প্রবেশমুখে পুলিশ-আনসার-বিজিবির সদস্যরা তল্লাশিচৌকি বসিয়েছেন। শহরের বাইরে থেকে জরুরি প্রয়োজনে আসা ইজিবাইকের যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হেঁটেই গন্তব্যে ছুটছে মানুষ। অনেকে বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ছে পুলিশি জেরার মুখে।
লকডাউনের নির্দেশনায় জরুরি পণ্যসেবার দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ঘোষণা থাকলেও বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানের অর্ধেক খোলা রেখে ব্যবসা চালু রয়েছে। অকারণে মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে, মুখের মাস্ক থুতনিতে আটকে রেখে ঘুরছে শহরের অলিগলিতে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় লকডাউন পালনে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের নেতারা মাঠে থাকার কথা থাকলেও পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কাউকে চোখে পড়েনি।
আজ সকাল সাড়ে নয়টায় শহরের প্রবেশমুখ মহারাজার মোড়ে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে। তাঁরা ইজিবাইক আটকিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনলে দেখে নিচ্ছেন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। উপযুক্ত প্রমাণ দিতে না পারলে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
শহরের কালিতলা, মডার্ন মোড়, চারুবাবুর মোড় এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও প্রধান রাস্তায় মানুষ ও ইজিবাইকের চলাচল রয়েছে। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। কলেজ মোড় এলাকায় ইজিবাইকচালক নাসিমুল হাসান বলেন, সাত দিনের লকডাউন দিয়েছে, মানতে তো সমস্যা নেই। সকালে সমিতির কিস্তি দিয়েছেন ২ হাজার ২০০ টাকা। এই কিস্তি যদি না দিতে হতো, তাহলে সুন্দর এক সপ্তাহ বাড়িতে থাকতে পারতেন।
শহরের গোপালগঞ্জ বাজার এলাকায় শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনের কথা শুনেছি। কিন্তু মাইকিং শুনিনি। বিশ্বাসও করিনি। বাড়ির বাইরে এসে দেখি অনেকেই তো আসছে। বাজারঘাট করতে যাই।’
মুন্সিপাড়া এলাকায় কথা হয় কলেজশিক্ষার্থী সিফাতের সঙ্গে। বাড়ি থেকে বের হয়েছেন কেন? সিফাতের উত্তর, ‘কোথায় লকডাউন, সবকিছুই তো চলছে। বাজার ঘুরে দেখেন, মানুষের হাট লেগে গেছে। কেবিএম কলেজে শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।’
বেলা ১১টায় গোড়-এ-শহীদ ময়দানের কাঁচাবাজারে ব্যাগ হাতে দুর্জয় রায় বলেন, প্রশাসন মানুষের ভালোর জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে। এখানে প্রশাসন একাই কী করবে, মানুষ যদি সচেতন না হয়। তিনি বলেন, ‘বাজার তো ঘুরে দেখলাম, অনেকের মুখে মাস্ক নেই, মাস্ক আটকায় রাখছে থুতনিতে। শহরের ভেতরে হয়তো লকডাউন চলছে, কিন্তু পাড়ামহল্লায় লকডাউন বলেন আর স্বাস্থ্যবিধি বলেন, কেউ মানতে চায় না।’
সকাল থেকে লকডাউন পালনে কিছুটা কড়াকড়ি থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢিলেঢালাভাব শুরু হয়। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শহর ঘুরে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে টহল দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন চলে গেলেই আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে সবাই।
অতিরিক্ত পুলিশ মো. মোমিনুল করিম বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা মাঠে আছি। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে জরিমানা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।’
জেলায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত রোববার শুধু সদর উপজেলায় আজ সকাল থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি।
এদিকে জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ০৫ শতাংশ। আজ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৭ জনের। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪৪ জন। করোনা শনাক্ত হওয়া ৩ হাজার ৬২৪ জনই সদর উপজেলার। সংক্রমণ বিবেচনায় সদর উপজেলায় করোনা শনাক্তের হার ৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭১ জনই এ উপজেলার। হিসাব অনুযায়ী সদর উপজেলায় মৃত্যুর হার ৪৯ শতাংশ।