দিনাজপুরে লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

দিনাজপুর শহরে চলছে লকডাউন। এই কড়াকড়ির মধ্যে মুখে মাস্ক ছাড়াই মাছবাহী গাড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন একজন। বুধবার দুপুর ১২টায় দিনাজপুরের শহরের প্রবেশমুখ কাঞ্চন সেতু এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দিনাজপুর সদর উপজেলায় কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার। তবে লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে চলছে। জেলা শহরের মোড়ে মোড়ে নজরদারি করার জন্য চৌকি বসানো হলেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুর জেলায় ১৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৭৬ জন। শনাক্তের হার ৩৯ শতাংশ। সদর উপজেলায় ১১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৬৩ জন। সদর উপজেলায় শনাক্তের হার ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার জেলায় ৮০টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ২৬ জনের। ওই দিন সদর উপজেলায় ৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ১৯ জন। শনাক্তের হার ৪৮ দশমিক ৭১ শতাংশ।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুর শহরের ৫টি প্রবেশমুখ সরকারি কলেজ মোড়, মহারাজার মোড়, কাঞ্চন মোড়, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এবং পুলহাট এলাকায় পুলিশ, আনসার ও বিজিবির সদস্যরা বসিয়েছেন চৌকি। মঙ্গলবার পুলিশ ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল আটক করায় আজ বুধবার শহরে এসব যানবাহন চলাচল কিছুটা কমেছে।

বুধবার সকালে দেখা যায়, শহরের কাঞ্চন মোড় ও সরকারি কলেজ মোড় এলাকার প্রবেশমুখে পুলিশের ব্যারিকেড। ইজিবাইক ও অন্যান্য যানবাহনে বিভিন্ন জেলার মানুষ জেলা শহরে আসার জন্য ব্যারিকেডের কাছে নামছেন। এখানে আসার পর তাঁরা হেঁটে শহরে ঢুকছেন। শহরের বিভিন্ন গলির প্রবেশমুখে পৌরসভা থেকে ব্যারিকেড দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।

সকাল থেকে লকডাউন পালনে কিছুটা কড়াকড়ি থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ঢিলেঢালাভাবে চলছে। বিশেষ করে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার সময়ও শহরের বিভিন্ন গলিমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন, ‘লকডাউন কঠোরভাবে পালন করাসহ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসনের ছয়টি টিম কাজ করছে। পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও মাঠে তৎপর রয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

সদর উপজেলায় সংক্রমণ বেশি

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু হয়নি। জেলায় বর্তমানে করোনা রোগী রয়েছেন ৬০৪ জন। এর মধ্যে ৪১১ জনই সদর উপজেলার। আক্রান্তদের ৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং বাকিরা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দিনাজপুর জেলা ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে এমনটি মানতে নারাজ অনেকেই। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, সম্প্রতি টমেটো, লিচু ও আমের বাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা এই জেলায় প্রবেশ করার ফলে সদর উপজেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে।

দিনাজপুর শহরের প্রবেশমুখ কাঞ্চন সেতু এলাকায় পুলিশের চৌকি বসানো হয়েছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ হেঁটে শহরে যাচ্ছে। বুধবার তোলা ছবি।
প্রথম আলো

শহরের গণেশতলা এলাকার বাসিন্দা শিশির শাহ বলেন, সদর উপজেলার করোনা পরীক্ষা বেশি, তাই শনাক্তও বেশি। উপজেলা পর্যায়ে যদি পরীক্ষা বাড়ানো যেত তাহলে প্রকৃত অবস্থাটা বোঝা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, প্রতিদিন উপজেলা থেকে বিভিন্ন কৃষিপণ্য নিয়ে কৃষকেরা শহরের বাজারে আসছেন, এখানকার মানুষের সঙ্গে ঘুরছেন। এই মানুষগুলো যে সংক্রমিত হয়ে নিজ এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন না তার কি নিশ্চয়তা আছে?

দিনাজপুর জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে সদরসহ সাতটি উপজেলার ভারতীয় সীমান্তেঘেঁষা। জেলায় করোনা সংক্রমণের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৪ মাসে হাকিমপুরে ১৩৫ জন, বিরামপুরে ৩৭৯ জন, ফুলবাড়ীতে ২১৬ জন, চিরিরবন্দরে ২৫৭, বিরলে ৩৫৩, বোচাগঞ্জে ১৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সেখানে এই সময়ে সদর উপজেলায় বুধবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।  

দিনাজপুর সিভিল সার্জন আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট ৭০টি শয্যা থেকে ৯০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত এখানে মোট ৮৬ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৩০টি শয্যা প্রস্তুত আছে। রোগী বাড়লে এখানে রাখা হবে। তারপরও যদি রোগী বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে মেডিকেলকে করোনা ডেডিকেটেড করার পরিকল্পনা আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি অবগত আছে।