দিনে চা বিক্রি ও রাতে পড়াশোনা করা হারুনের স্বপ্ন উকিল হওয়ার

এ বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি পাস করেছেন চা–দোকানি হারুন মিয়া
ছবি: প্রথম আলো

পারিবারিক অভাব–অনটনের কারণে কম বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয় হারুন মিয়াকে। এর ফলে স্কুল থেকে ঝরে পড়েন তিনি। পরে গৌরীপুর পৌর শহরের কালিখলা এলাকায় চায়ের দোকান দেন। এরপরও থেমে থাকেননি। দিনে চা বিক্রি করে চালিয়েছেন সংসার। গভীর রাতে বাড়িতে ফিরে বসেছেন বই নিয়ে। এভাবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পাস করেছেন হারুন। এখন তাঁর স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে নামকরা উকিল হওয়ার।

হারুন মিয়ার বাড়ি গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামে। তাঁর বাবা আবদুল জব্বার পেশায় সবজি বিক্রেতা। মা রহিমা খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাইবোনের মধ্যে হারুন পঞ্চম। চা বিক্রি করে ছোট এক বোনের পড়োশোনার খরচও চালান তিনি।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানিয়েছেন, চা–দোকান চালানোর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হারুন। পূর্বঘোষণা ছাড়া হঠাৎ কোনো দিন দোকান বন্ধ রাখতে হলে, দোকানের নিয়মিত গ্রাহকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানিয়ে দেন তিনি।

হারুন মিয়া বলেন, পরিবারে অভাব থাকায় জীবিকার তাগিদে ২০১০ সালে স্কুল ছাড়তে হয় তাঁকে। ২০১৪ সালে চা–দোকান শুরু করেন। তাঁর চা–দোকানে নিয়মিত আসেন শিক্ষক এমদাদুল হক, আবদুল মালেক ও সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম। চা বিক্রির ফাঁকে সুযোগ পেলেই বই বা সংবাদপত্র পড়েন তিনি। এটা দেখে ওই তিনজন তাঁকে আবার পড়াশোনা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করেন। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কুলে ভর্তি হন হারুন। চা–দোকানের কাজ শেষে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বেশির ভাগ দিনই মধ্যরাত হয়ে যায় তাঁর। তবুও বাড়িতে ফিরে পড়াশোনা করেছেন নিয়মিত। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২৪ বছর বয়সে পাস করেছেন এসএসসি।

হারুন মিয়া আরও বলেন, ‘আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই। যেন পড়াশোনা শেষ করে উকিল হতে পারি—এটাই স্বপ্ন আমার।’

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউটর আবদুল মালেক বলেন, অষ্টম শ্রেণি পাশ করে ঝরে পড়া যে কেউ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বয়সের কোনো বাধা নেই। এ সুযোগটাই নিয়েছেন হারুন। তিনি ২৪ বছর বয়সে এসএসসি পাশ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছা থাকলে সব বয়সেই পড়াশোনা করা সম্ভব।

হারুনের চা–দোকানের নিয়মিত গ্রাহক ও গৌরীপুর ইসলামাবাদ সিনিয়র মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এমদাদুল হক বলেন, ‘হারুন আমাদের অনেকের কাছে প্রিয় মানুষ। প্রতিবছর তিনি নিজের দোকানের সেরা গ্রাহককে বর্ষসেরা চা–প্রেমী হিসেবে সম্মাননা দেন। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে চায়ের দাম অর্ধেক রাখেন হারুন।’