দীঘিনালায় ঝরনা থেকে গ্রামের ঘরে পানির সুবিধা

ঝরনা থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করছেন খাগড়াছড়ির দীঘিনালার নাড়াইছড়ির অনিল জীবন কারবারিপাড়ার বাসিন্দা শেফালী চাকমা নামের এক নারী। ২২ ডিসেম্বর সকালে
ছবি: সংগৃহীত

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম নাড়াইছড়ির অনিল জীবন কারবারিপাড়ার বাসিন্দাদের পানির সমস্যা নিয়ে অনন্ত চাকমা নামের এক শিক্ষার্থী গত ২ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন। কীভাবে পানির সুবিধা পাওয়া যায়, সে বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরেন। একটি পোস্টেই সমাধান হয়ে গেছে অনিল জীবন কারবারিপাড়াবাসীর পানির কষ্ট।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনের পাঠানো অর্থের সাহায্যে ও গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা খরচে গ্রামের লোকজন এখন ঘরে বসে ঝরনার পানির সুবিধা পাচ্ছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনিল জীবন কারবারিপাড়ায় ৩০টি পরিবারের বসবাস। গ্রামবাসীকে পানি আনতে এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। গ্রামবাসী ঝরনা থেকে কীভাবে গ্রামে পানি আনা যায়, এ বিষয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে রাঙামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিএসসি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অনন্ত চাকমা বিশেষ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের নল (পাইপ) ও ট্যাংকের মাধ্যমে গ্রামে পানি আনা সম্ভব বলে জানালে সবাই একমত হন। সে বৈঠকের এক মাসের মধ্যে গ্রামের মানুষ ঝরনার পানি ঘরের দুয়ারে সুবিধা পাচ্ছে।

অনিল জীবন কারবারিপাড়ার বাসিন্দা শেফালী চাকমা ও প্রীতি চাকমা বলেন, ‘আগে আমাদের পানি আনতে হলে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে মাইনী নদী ও ছড়ায় যেতে হতো। এখন আর আমাদের পানির কষ্ট নেই। ৫ ডিসেম্বর থেকে আমরা ঘরে বসে পানির সুবিধা পাচ্ছি।’

কথা হয় রাঙামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিএসসি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অনন্ত চাকমার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝরনা থেকে গ্রামে পানি আনার চিন্তা থেকে এ উদ্যোগ নিয়েছি। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আমাদের খরচ হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। সব টাকাই বিভিন্ন স্থানের লোকজন পাঠিয়েছেন। আমরা উলুগাছের ছড়া ঝরনা থেকে দেড় হাজার ফুট দূরে একটি এক হাজার লিটারের পানির ট্যাংক বসিয়েছি। ঝরনা থেকে পানি ট্যাংকে জমা হয়। আর সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে দুই-তিন শ ফুট দূরে দূরে বসতবাড়িতে সরবরাহ করেছি। বিভিন্ন মানুষের আর্থিক সাহায্যে গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে নভেম্বরের ২০ তারিখ থেকে কাজ শুরু করে ৪ ডিসেম্বর কাজ শেষ করেছে। ৫ ডিসেম্বর থেকে গ্রামের ১০টি পরিবার পানির সুবিধা পাচ্ছে। গ্রামে ৩০টি পরিবারের বসবাস থাকলেও আপাতত ১০টি পরিবার এ সুবিধার আওতায় এসেছে। আরও আর্থিক সাহায্য ও ট্যাংক সুবিধা পেলে অন্য পরিবারগুলোকেও এ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আমরা কোনো কারিগরি সহায়তা নিইনি।’

পানির সুবিধার প্রকল্পটির আর্থিক সাহায্যের উদ্যোক্তা রাঙামাটির নানিয়ারচর ঘিলাছড়ি এলাকার বাসিন্দা ও রাউজান নোয়াপাড়া পুলিশ বক্সে কর্মরত ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) প্রিয়দর্শী চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেসবুকে অনন্ত চাকমার পোস্ট দেখে দুর্গম গ্রামটির পানির সমস্যার সমাধানের অর্থ সংগ্রহ পাঠাই। গ্রামবাসী এখন ঘরে বসে পানির সুবিধা পাচ্ছে শুনে নিজেদেরও আনন্দ লাগছে। সমাজের সবার উচিত দুর্গম এলাকার মানুষের উন্নয়নে এগিয়ে আসা।’