দীঘিনালায় সম্প্রীতির অনন্য নজির, পুরস্কার পেল মাদ্রাসা ও মন্দির কমিটি

বোয়ালখালী ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জসিমের হাতে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বুধবার সকালে
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতি বজায় রাখার অনন্য নজির স্থাপন করায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বোয়ালখালী ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং বোয়ালখালী নারায়ণ মন্দির পরিচালনা কমিটিকে পুরস্কৃত করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারের চেক দেওয়া হয়।

২০০০ সাল থেকে মন্দিরের বিভিন্ন পূজা–পার্বণে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের খাবার সরবরাহ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। আবার প্রতিবছর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সব সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনমেলার জন্য বার্ষিক একটি মেজবানেরও আয়োজন করে।

এ বিষয়ে গত ১৩ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইনে ‘পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশকে খাওয়াচ্ছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ’ ও ১৪ অক্টোবর প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে ‘দীঘিনালায় সম্প্রীতির নজির’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বোয়ালখালী ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক আবদুল্লাহ মেহেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এ সম্প্রীতির বন্ধন ২১ বছর। এ বন্ধন যুগ যুগ ধরে থাকবে। চিরস্থায়ী হবে। ধর্ম ভিন্ন হলেও মানুষ হিসেবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আমরা চাই, এই সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত সারা দেশের মানুষ অনুকরণ করুক।’

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম বলেন, ‘মন্দিরের সব পূজা–পার্বণে আমাদের সহযোগিতা থাকে। তেমনি মাদ্রাসার মাহফিলেও সব সম্প্রদায় সহযোগিতা করে। প্রতিবছর মাদ্রাসায় একটি দিন সম্প্রীতির মেজবানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সব সম্প্রদায়ের সদস্যরা মিলিত হন।’

বোয়ালখালী নারায়ণ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মৃদুল কান্তি সেনের হাতে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বুধবার সকালে
ছবি: সংগৃহীত

বোয়ালখালী নারায়ণ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মৃদুল কান্তি সেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে জাতি ভেদাভেদ নেই। একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। আমাদের মন্দিরের অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। আবার রাস উৎসবে সব সম্প্রদায় আমাদের আর্থিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের পুরস্কার হিসেবে জেলা প্রশাসক আমাদের এক লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছেন।’

আজ চেক বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন দীঘিনালার ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত বা নজির দেখে সত্যিই অভিভূত। এখানে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে যে আত্মার সম্পর্ক, তা কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই। এই সম্প্রীতির বন্ধনের আত্মবিশ্বাসে দীঘিনালাকে সাজাতে চাই।’

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১ বছরের যে সম্প্রীতির নজির, তা দেশের জন্য অনুকরণীয়। আমরা এমন একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই। এ থেকে নতুন প্রজন্ম এবং অন্যরাও শিক্ষা নিতে পারে।’