দুই আ.লীগ নেতা একসঙ্গে দুই সংগঠনের পদে

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাজেদুর রহমান (বাঁয়ে) ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী মিয়া।
ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাজেদুর রহমান ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী মিয়া একই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগেরও গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালন করছেন। এই দুজন একই সঙ্গে দুটি সংগঠনের পদে থাকায় সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোমিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও সফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম আপন ভাই হওয়ায় সম্মেলনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের পরামর্শে কমিটি বাতিলও করা হয়। এর ১০ মাস পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও আবু হাসনাতকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ।

ঘোষিত কমিটিতে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাজেদুর রহমানকে সহসভাপতি ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী মিয়াকে উপদপ্তর সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। গত ২২ মে মাজেদুর রহমান ও গোলাম রব্বানী মিয়াকে রেখেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি।

আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী কোনো নেতা যদি আওয়ামী লীগের পদ পান, তবে তাঁকে অন্য অঙ্গসংগঠন থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু মাজেদুর রহমান ও গোলাম রব্বানী মিয়া আওয়ামী লীগের পদ পাওয়ার ১০ মাস হলেও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাড়েননি।

ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, যোগ্যতা থাকার পরও অনেক নেতা-কর্মী দলের নেতৃত্বে যেতে পারছেন না। একই সঙ্গে দুটি সংগঠনের পদে থাকা দলের নিয়মনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে ওই দুজনকে একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন সংগঠনের পদে বসানো হয়েছে।

এদিকে একই সঙ্গে দুটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ ধরে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক সাধারণ নেতা-কর্মী। শহিদুল ইসলাম নামে উপজেলা যুবলীগের এক কর্মী বলেন, যে সংগঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতা থাকার পরও পদস্বল্পতার কারণে নেতা-কর্মীরা কমিটিতে ঠাঁই পান না, সেখানে জেলা আওয়ামী লীগ একই ব্যক্তিকে দুই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে ঠিক করেনি।

এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পাওয়ার পর মাজেদুর রহমানকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল।

আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত বলেন, উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সামনেই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি আসবে। আওয়ামী লীগের পদ পেলে আগের সংগঠনের নেতৃত্ব ছেড়ে আসার নিয়ম থাকলেও যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা সম্মেলনের মাধ্যমে বিদায় নিতে চাচ্ছেন।

যোগাযোগ করা হলে গোলাম রব্বানী মিয়া বলেন, জেলা কমিটি তাঁকে যোগ্য মনে করে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও তাঁদের কথা ফেলতে পারেননি। তৃণমূল ছাত্রলীগ গুছিয়ে দিয়েই নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন গোলাম রব্বানী। আর মাজেদুর রহমান অল্প সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যুবলীগের সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন।

দুই নেতার একই সঙ্গে পৃথক সংগঠনের পদে থাকার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ ধরে রাখতে হলে ওই দুই নেতাকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্ব ছেড়ে আসতেই হবে। একই সঙ্গে দুই সংগঠনের পদ ধরে রাখার সুযোগ নেই।