দুই আ.লীগ নেতার ওপর কাদের মির্জার অনুসারীদের হামলা, গুলির অভিযোগ

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে হামলায় আহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরীসহ দুই নেতার ওপর পৃথক হামলার ঘটনা ঘটেছে। বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীরা আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে প্রথমে নুর নবী চৌধুরী ও পরে দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক নুরজ্জামান স্বপনের ওপর এ হামলা চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হামলায় ‘গুলিবিদ্ধ’ নুর নবী চৌধুরীকে (৬৬) প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া অপর ঘটনায় আহত নুরুজ্জামান স্বপনকে (৪৪) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাদল প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর নবী চৌধুরী নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে এক আরোহীসহ বসুরহাটের দিকে আসছিলেন। পথে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টারপাড়া এলাকায় কাদের মির্জার অনুসারী মো. রাশেল ওরফে কেচ্ছা রাশেলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী সশস্ত্র হামলা চালান। হামলাকারীরা নুর নবীর দুই পা রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছেন এবং ডান পায়ে গুলি করেছেন। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, এর প্রায় এক ঘণ্টার মাথায় পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরহাজার এলাকার বৌদ্ধনিগো বাড়ির সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক নুরজ্জামান স্বপনের ওপরও সশস্ত্র হামলা চালায় কাদের মির্জার সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁরা নুরুজ্জামানকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

নুর নবী চৌধুরীর বাম পায়ের হাটুর নিচে একটি গভীর গর্তের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া ডান পায়ে হাটুর মাঝখানে ভাঙা। আজ সোমবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

হামলার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আজ বেলা আড়াইটার দিকে আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্বপন মাহমুদ নামের একজন ফোন ধরেন। তিনি বলেন, মেয়র সাহেব একটু অসুস্থ, তাই বিশ্রামে আছেন। নুর নবী চৌধুরীর ওপর হামলার কথা তাঁরা শোনার পর জেনেছেন, পাওনা টাকাপয়সা নিয়ে সেখানে কী একটা ঝামেলা হয়েছে।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জার ঘোষিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার বলেন, ‘আমি শুনেছি, সরকারি ঘর দেবে বলে একজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন, কিন্তু ঘর দেননি। ওই বিরোধ এবং তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দলীয় সাম্প্রতিক বিরোধ, এই দুই বিরোধের জেরে নুর নবী চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে বলে শুনেছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, নুর নবী চৌধুরীর বাম পায়ের হাটুর নিচে একটি গভীর গর্তের চিহ্ন রয়েছে। সেটি গুলির কি না তা পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না। এ ছাড়া ডান পায়ে হাটুর মাঝখানে ভাঙা। এ জন্য তাঁকে পঙ্গু হাসপাতালে অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাদের মির্জার অনুসারী কেচ্ছা রাশেল, জিসান, বোরহান, মিকনসহ একদল সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তাঁর ডান পায়ে গুলি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইসমাইল হোসেন ওরফে পলাশ নামের একজনকে আটক করা হয়েছে।

এ ছাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান স্বপনের ওপর এক গ্রুপের লোকেরা হামলা চালান বলেও জানান ওসি। এই দুটি ঘটনার পর বসুরহাটের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত।