দুই প্রার্থীর ‘কথার যুদ্ধ’

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দেন। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাত ১০টার দিকে শফি আহমদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা দিয়ে হাবিবুরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে শফি আহমদ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে দলেই অসন্তোষ রয়েছে বলে দাবি করেন। এই মন্তব্যের ব্যাপারে হাবিবুরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘শফি চৌধুরী বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বয়স্ক মানুষ। কোন সময় কী বলেন, কী করেন, তার ঠিক নেই। তাঁর কর্মীদেরই বলতে শুনেছি, বয়সের কারণে তিনি প্যান্টে প্রস্রাব-পায়খানা পর্যন্ত করে দেন। সুতরাং তাঁর কথায় কান দিয়ে লাভ নেই।’

হাবিবুরের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় পাল্টা জবাব দিয়ে শফি আহমদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আর কী মন্তব্য করব। আমার বয়স ৮৩ হলেও এই যে সকালে বের হয়েছি, এখন রাত ১০টা বাজতে চলেছে, কিন্তু এখনো আমাকে টয়লেটে যেতে হয়নি। এখনো প্রস্রাব-পায়খানা করতে হয়নি। আমার সকালের ওজু আছে, সারা দিন নামাজ পড়েছি। ইনশা আল্লাহ, আমার কাপড়-প্যান্ট কিছুই নষ্ট হয়নি।’

সিলেট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী।
ছবি: সংগৃহীত

সোমবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে শফি আহমদ জানিয়েছিলেন, বিএনপি দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচনী এলাকার মানুষের ইচ্ছানুযায়ী তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপনির্বাচনে অংশ নেবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘দলের (আওয়ামী লীগের) নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন, প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরীকে মানবিক দিক বিবেচনায় মনোনয়ন দেবে। আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাও মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ আছেন।’ প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী তাঁকে ফোন করে প্রার্থী হতে শুভকামনা জানিয়েছেন বলেও তিনি তখন দাবি করেন শফি আহমদ।

গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সভায় শফি আহমদ চৌধুরীর বক্তব্যের এসব বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা নৌকা প্রতীকের পক্ষে রয়েছেন। অন্য যাঁরা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তাঁরাও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। শ্রদ্ধেয় মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরীও আমার সঙ্গেই আছেন এবং থাকবেন। সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করব।’

আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগেই দুই প্রার্থীর এভাবে পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের বিষয়টিকে ‘কথার যুদ্ধ’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় হরহামেশাই এসব হয়ে থাকে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা প্রার্থীদের কাছ থেকে শালীন আচরণ প্রত্যাশা করি। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সবাইকেই সংযত আচরণ করা উচিত।’

আগামী ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি। ২৪ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৫ জুন। প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা চালাতে পারবেন।

গত ১১ মার্চ করোনায় সংক্রমিত হয়ে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। হাবিবুর ও শফি চৌধুরী ছাড়াও এখানে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাহমিদা হোসেন ও শেখ জাহিদুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।