দুই মাস না যেতেই ঘোলা

খুঁটি থেকে বাতি খুলে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। সোমবার সকালেও বাতি খুলতে দেখা গেছে।

উদ্বোধনের দুই মাস না যেতেই ভেতরে পোকা ও পানি ঢুকে সড়কবাতিগুলো ঘোলা হয়ে গেছে। রোববার রাতে রাজশাহী নগরের তালাইমারী সড়কের হাদিরমোড় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী মহানগরের তালাইমারী থেকে কল্পনা সিনেমা হলের মোড় (স্বচ্ছ টাওয়ার) পর্যন্ত চার লেন সড়কের দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সড়কবাতি দেওয়া হয়েছে। আর সড়কসংলগ্ন বাঁধে স্থাপন করা হয়েছে সুদৃশ্য গার্ডেন লাইটের খুঁটি। প্রতিটি খুঁটিতে রয়েছে পাঁচটি করে অত্যাধুনিক বাতি। ২৭ মার্চ রাত ৯টায় সড়কবাতিগুলো উদ্বোধন করা হয়। দুই মাস না যেতেই বৃষ্টির পানি ও পোকার কারণে বাতিগুলো ঘোলা হয়ে গেছে। ফলে বাতিগুলো খোলা হচ্ছে।

যাঁরা বাতি খুলছেন, তাঁরা বলেছেন, বাতিগুলোর গোড়ায় বৃষ্টির পানি জমছে আর তার ভেতর পোকা ঢুকে মরে থাকছে। এতে বাতিগুলো ঘোলা হয়ে আসছে। ঠিক করার জন্য খোলা হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এক বছরের ওয়ারেন্টি আছে। এর মধ্যে বাতির কিছু হলে ঠিকাদার ঠিক করে দেবেন। সড়ক ও বাঁধের এই বাতিগুলোর পেছনে সিটি করপোরেশনের ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

উদ্বোধনের পর সিটি করপোরেশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনন্য রূপ পেয়েছে রাতের রাজশাহী। যেন সড়কে রাজকীয় আলোতে মুগ্ধ রাজশাহীবাসী।’

উদ্বোধনকালে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেছিলেন, বাংলাদেশের মধ্যে শুধু রাজশাহীতে এমন দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। এই আলোকায়নে রাস্তায় নাগরিকদের চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যের হচ্ছে, অন্যদিকে নিরাপত্তা বাড়ছে। ভবিষ্যতে বড় সড়কগুলোতে এমন দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সড়কবাতি লাগানো হবে। এভাবেই রাজশাহীকে আরও আধুনিক, উন্নত, বাসযোগ্য ও সৌন্দর্যের নগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১২৭ কোটি ৪৯ লাখ ব্যয়ে নগরের কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কটি প্রশস্ত করার পর সম্প্রতি সড়কের আইল্যান্ডে বসানো হয় ১৩০টি আধুনিক সড়কবাতির দৃষ্টিনন্দন পোল। প্রতিটি খুঁটির মাথায় লাগানো হয়েছে ১৩টি আধুনিক বাতি। এ ছাড়া সড়কসংলগ্ন বাঁধে স্থাপন করা হয়েছে ১৮০টি আধুনিক সুদৃশ্য গার্ডেন লাইটের খুঁটি। প্রতিটি খুঁটিতে আছে পাঁচটি অত্যাধুনিক বাতি। অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলবে ও নিভবে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

গত রোববার রাত থেকে পোলগুলো থেকে বাতি খুলে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। সোমবার সকালেও বাতি খুলতে দেখা গেছে। রাত পর্যন্ত ২৬টি পোল থেকে বাতি খোলা হয়েছে। যাঁরা বাতি খুলছিলেন, তাঁদের কাছে জানতে চাইলে একজন বলেন, তাঁরা ঠিকাদারের লোক। বাতিগুলোর গোড়ায় বৃষ্টির পানি ঢুকছে। এর মধ্যে পোকা ঢুকে মরে থাকছে। তখন সুন্দর বাতিগুলো ঘোলা হয়ে যাচ্ছে, ফলে আলো ছড়াচ্ছে না। এখন কী করা হবে জানতে চাইলে ওই কর্মচারী বলেন, খুলে নিয়ে গিয়ে নিচে একটা ফুটো করে দেওয়া হবে। তাহলেই আর পানি জমবে না। পোকা পড়েও মরবে না।

সড়কবাতির পোলেও কয়েকটি বাতি নিভে থাকতে দেখা গেছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এক লোক বাতি খোলা দেখছিলেন। তিনি বলেন, বাতির এই ত্রুটির কথা আগে থেকে কেন চিন্তা করা হয়নি, এটা ভেবেই অবাক লাগছে।

সড়কে আলোর কাজ করেছে ‘হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের মালিক আশরাফুল হুদার সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, বাতিগুলোর কোনো সমস্যা হয়নি। হোল্ডারের গ্যাপ দিয়ে পোকামাকড় বা মশা যাতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য খোলা হচ্ছে। এই গ্যাপটায় একটা প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে।

সড়কের কিছু বাতি জ্বলছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রোববার রাত ১১টার সময় আমি দেখে এসেছি শতভাগ বাতি জ্বলছে। এ ব্যাপারে সব সময় সচেষ্ট আছি।’