দুদকের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য নূর আফরোজের ৭ বছরের কারাদণ্ড

রায়ের পর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নূর আফরোজ বেগম ওরফে জ্যোতিকে
ছবি: প্রথম আলো

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় বগুড়ার সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নেতা নূর আফরোজ বেগম ওরফে জ্যোতিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার আলাদা দুটি ধারায় আদালত এ রায় দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আসামিকে ৫৩ লাখ টাকার সম্পদ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। বগুড়ার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এমরান হোসেন চৌধুরী আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ রায় দেন।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া আদালতের দুদকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে দুটি অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আলাদা ধারায় সাত বছরের সাজার রায় দিয়েছেন বিচারক। রায় প্রদানের সময় আসামি নূর আফরোজ কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী আরও বলেন, ২৮ লাখ ১৭ হাজার ১৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় দুদক আইনের ২৬(২) ধারায় ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫৩ লাখ ২২ হাজার ৭৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

নূর আফরোজ বর্তমানে জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। অষ্টম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এ ছাড়া বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ছিলেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পেয়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নূর আফরোজের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের বগুড়া জেলার সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমেদ। দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সে সময়ের উপপরিচালক আনোয়ারুল হক মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে নূর আফরোজের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, নূর আফরোজ বেগম ২৮ লাখ ১৭ হাজার ১৮৪ টাকার সম্পদের কথা গোপন করে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন এবং ৫৩ লাখ ২২ হাজার ৭৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০১৭ সালে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

দুদকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১১ মে মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য ছিল। এ সময় নূর আফরোজ বেগমের আইনজীবী সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সঙ্গে ১৯ মে রায় প্রদানের দিন ধার্য করেন। সেই অনুযায়ী আজ মামলাটির রায় ঘোষণা করা হলো।

রায় প্রদানের পর নূর আফরোজের আইনজীবী আসামি সাবেক সংসদ সদস্য হওয়ায় জেলখানায় তাঁকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান। এ বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে বিচারক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নূর আফরোজের আইনজীবী আবদুল বাসেদ। তিনি বলেন, এটি ন্যায্য রায় হয়নি। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।