ছয় মাস বয়সী দুধের শিশু সিয়াম জানে না, সে কী হারিয়েছে। দুঃখটা যে তার অনেক বড়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডিতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বাবা গাউসুল আজম মারা গেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর লাশ বাড়িতে পৌঁছাবে। অধিক শোকে পাথর সিয়ামের মা কাকলী খাতুন আর নানি আলোমতির পাশে এক স্বজনের কোলে বসে সবাইকে দেখছে সিয়াম।
আজ রোববার বিকেলে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামে নিহত গাউসুল আজমের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। গাউসুল ওই গ্রামের আজগর আলীর ছেলে।
রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গাউসুল আজ ভোরে মারা যান। এর আগে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকায় তাঁকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু আজ ভোরে তিনি না–ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ঢাকা থেকে লাশবাহী গাড়ি দুপুরের দিকে গাউসুলের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করে।
বিকেলে গাউসুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের কয়েক শ নারী-পুরুষ বাড়ির উঠান, বারান্দা ও ঘরে অবস্থান করছেন। তাঁরা গাউসুলের মা–বাবা ও স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাড়ির পাশে বাঁশবাগানে গাউসুলের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে। পাশে চেয়ারে বসে বাবা আজগর আলী বিলাপ করে বলছেন, ‘আহারে সোনা, আমার চান, আমার জীবনের সবকিছুই শেষ হয়ে গেল। তুমি (গাউসুল) এখন বাড়ি আইসে কী করবা। এই বাঁশবাগানে আজ থেকে তুমি শুয়ে থাকপা। আমার বুকটা ফাইটে যাচ্ছে রে...।’ খাটুয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে রাতে এশার নামাজের পর জানাজা শেষে গাউসুলের দাফন সম্পন্ন হবে।
মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে গাউসুল আজম ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন। গত বছর নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। দুই ভাই–বোনের মধ্যে গাউসুল ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা আজগর আলী কৃষক। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন গাউসুল।
দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে সন্তান জীবন দিয়েছেন। এখন পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন গাউসুলের স্বজনেরা। গাউসুলের স্ত্রী কাকলী খাতুন এ বছর নেহাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য গাউসুলের স্ত্রী কাকলীর জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করারও দাবি জানান।