দুর্গাপুরে বিস্ফোরিত মর্টার শেলটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হতে পারে

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার নেত্রকোনের দুর্গাপুর পৌরসভার শিবগঞ্জ বাজার এলাকার ওই ভাঙারির দোকানে
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভাঙারির দোকানে বিস্ফোরিত মর্টার শেলটি বহু পুরোনো বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহের পর তাঁরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার হতে পারে। ওই সময়ে রুশ সৈনিকেরা এ ধরনের মর্টার শেল ব্যবহার করতেন।

পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ বিশেষজ্ঞ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন গতকাল বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিস্ফোরিত মর্টার শেলটির খোলস একত্র করে দেখেছি। তদন্তে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বিস্ফোরিত মর্টার শেলটির দৈর্ঘ্য ২৭ ইঞ্চি। এটি ১২০ এমএম মর্টার শেল নামে পরিচিত। মর্টার শেলটি খুবই পুরোনো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রুশ সৈনিকেরা যে রকম মর্টার শেল ব্যবহার করতেন, তার সঙ্গে এটির ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মিল রয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুর পৌরসভার শিবগঞ্জ বাজার এলাকার ওই ভাঙারির দোকানে গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দোকানঘরটির শাটার ও টিনের চাল উড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান উপজেলার চালিতাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অটোরিকশার মেকানিক সবুজ মিয়া (৩৬)। আর দোকানটির মালিক কাঞ্চন মিয়ার ছেলে নাহিদ মিয়া (২৫) গুরুতর আহত হন। নাহিদের বাড়ি পৌর শহরের খুজিউড়া এলাকায়। দুজন পরস্পরের আত্মীয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা স্থানটি ঘিরে রাখে। আহত নাহিদকে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। রাতেই তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। নাহিদের শরীরের প্রায় ২৫ শতাংশ ঝলসে গেছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ঘটনাস্থলে যান ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হারুন অর রশিদ, নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান জুয়েলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। এ সময় বিস্ফোরিত মর্টার শেলটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তা পরীক্ষার জন্য সিআইডির গবেষণাগারে পাঠানো হচ্ছে।

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, সবুজ মিয়া ও নাহিদ হয়তো না বুঝে মর্টার শেলটিতে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিলেন বা সেটি কাটতে চেয়েছিলেন। তখন এটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। মর্টার শেলটি কোথা থেকে ওই ভাঙারির দোকানে এল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। দোকানমালিক কাঞ্চন মিয়াকে মঙ্গলবার দুপুরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।