অপরিকল্পিত পুকুর খনন
দুর্গাপুরের বিল দুটি এখন কৃষকের দুঃখ
রাজশাহীর দুর্গাপুরের আনলিয়ার ও পোড়াবিলে ১৮টির বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হচ্ছে খেতের ফসল।
রাজশাহীর দুর্গাপুরের আনলিয়ার বিলের জমিগুলো ছিল তিন ফসলি। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতায় এখন সেখানে ঠিকমতো ফসল হয় না। এবারও কৃষকদের চাষের ধান, করলা, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।
দুর্গাপুরের নওপাড়া ইউনিয়নে এই আনলিয়ার বিল। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ১০ বছর ধরে আনলিয়ার পাশাপাশি ইউনিয়নের পোড়াবিলে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে এসব বিলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেও পুকুরমালিকেরা তা বন্ধ করে দেন।
ভুক্তভোগী চাষিরা জানান, বিলের পানি একটি সরকারি খাল দিয়ে বারনই নদে নেমে যায়। খালের মুখে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় প্রায় ৩০০ একর জমি জলাবদ্ধতায় অনাবাদি হয়ে পড়েছে।
দুই বিল মিলিয়ে পুকুরের সংখ্যা ১৮টির বেশি। স্থানীয় কৃষকদের কাছে থেকে শামীম রেজা নামের এক পুকুরমালিকের মুঠোফোন নম্বর পাওয়া যায়। শামীম বলেন, তাঁর পুকুর ছাড়াও আরও কয়েকজন প্রভাবশালী মালিকের পুকুরের কারণে পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাঁর পুকুরের পাড় প্রশাসনের লোকজন যেভাবে কেটে রেখে গেছেন, সেভাবেই আছে, তিনি শুধু তার মুখে নেট দিয়েছেন। অন্য পুকুরের পাড়গুলো না কাটলে শুধু তাঁর এক পুকুর দিয়ে পানি দ্রুত নামতে পারবে না।
২০১৮ সালে দুর্গাপুর উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমর পাল পুলিশ নিয়ে বিলে গিয়ে পুকুরের পাড় কেটে বিলের পানি খালে নামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর মাঠে চাষিরা ধান থেকে শুরু করে সব ধরনের ফসলের চাষ করেন। কর্মকর্তা বদলি হয়ে যাওয়ার পর আবারও খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হলেই খেতে পানি আটকে থাকে।
পুকুরের পাড় প্রশাসনের লোকজন যেভাবে কেটে রেখে গেছেন, সেভাবেই আছে, আমি শুধু তার মুখে নেট দিয়েছি।শামীম রেজা, পুকুর মালিক
পালশা গ্রামের চাষি নূরুজ্জামান বলেন, এবার তিনি আট বিঘা জমিতে সবজি চাষ ও চার বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন। দেড় মাস আগে বৃষ্টিতে সব তলিয়ে যায়। ইউএনও অফিস থেকে সার্ভেয়ার পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা খেতের নষ্ট ফসলের ছবিও তুলে নিয়ে যান। এরপর আর কিছু করা হয়নি।
এমন অভিযোগ করেন দুটি বিলে চাষাবাদ করা কৃষক মইফুল হোসেন, তজের উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, মনসুর রহমানসহ ছয়জন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে আনলিয়ার বিলে সরেজমিনে দেখা যায়, মরিচগাছ মরে গেছে। করলার শুধু মাচা রয়েছে। গাছ মরে গেছে। যে জমিতে ধান লাগানো হয়েছিল, সে জমিতে এখন হাঁটুপানি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা বলেন, তিনি সম্প্রতি এই উপজেলায় যোগ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করবেন।