দুর্গাপুরের সাবেক ওসিসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তের নির্দেশ

প্রতীকী ছবি

যুবলীগ নেতাকে আটক করে থানায় এনে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমানসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে নেত্রকোনা দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল হক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

তদন্তের বিষয়ে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে আদালতের আদেশ কপিটি পেয়েছি। মামলাটির তদন্তভার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এ কে এম মনিরুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছে।’ যোগাযোগ করা হলে এ কে এম মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে তদন্তকাজ শুরু হয়ে গেছে। মামলাটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। দ্রুত তদন্তকাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

মামলায় অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন দুর্গাপুর থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হালিম ও কনস্টেবল জুয়েল রানা। মামলার বাদী আলম তালুকদার (২৩) পৌরসভার পুলিশ মোড় এলাকার মৃত আলাল তালুকদারের ছেলে এবং নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের তিনবারের সাবেক সাংসদ প্রয়াত জালাল উদ্দিন তালুকদারের ভাতিজা। আলম বাকলজোড়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি পেশায় বালু ব্যবসায়ী।

আলম টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ওসির নির্দেশে একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রাখা হয়। পরে রাত দেড়টার দিকে ওসি আলমকে বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে আলম অচেতন হয়ে বমি শুরু করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট রাত সাড়ে সাতটার দিকে দুর্গাপুর থানার তখনকার ওসি মিজানুর রহমানের নির্দেশে থানার উপপরিদর্শক আবদুল হালিম ও কনস্টেবল জুয়েল রানা পৌর শহরের মাছমহাল থেকে আলম তালুকদারকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। আলমের দাবি, ওসির কক্ষে ওই দুই পুলিশ সদস্য তাঁকে নিয়ে গেলে ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘বালু ব্যবসা করে প্রচুর টাকা কামিয়েছিস, আমাকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে।’ আলম টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ওসির নির্দেশে একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রাখা হয়। পরে রাত দেড়টার দিকে ওসি আলমকে বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে আলম অচেতন হয়ে বমি শুরু করেন।

পরে পুলিশ তাঁকে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই তাঁকে পুলিশ ও পরিবারের লোকজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। পরদিন বিকেলে কিছুটা সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে রাতে থানায় এনে কাগজে স্বাক্ষর রেখে আদালতে চালান দেওয়া হয়। আলম আদালতের কাছ থেকে জামিন পান।

ভুক্তভোগী বলেন, ঘটনার পরদিন সকালে খবর পেয়ে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সীসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা ওসি মিজানুর রহমানের আইনবহির্ভূত আচরণের সত্যতার প্রমাণ পান। এ কারণে পুলিশ সুপার ওই দিনই ওসি মিজানুরকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে যুক্ত করেন। এর দুই দিন পর মিজানকে বরিশাল রেঞ্জে যুক্ত করা হয়। আর এসআই হালিমকে মদন থানায় ও কনস্টেবল জুয়েলকে খালিয়াজুরির লেপসিয়া ফাঁড়িতে বদলি করা হয়। এ ছাড়া ঘটনাটি তদন্তের জন্য ওই দিন ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাছ উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার আলম তালুকদার বাদী হয়ে তিন পুলিশ সদস্যের নামে আদালতে মামলা করেন।
এ ব্যাপারে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখন যেহেতু একটি নিয়ম হয়েছে, গণমাধ্যমে কথা বলতে গেলে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের অনুমতির প্রয়োজন, তাই ঊধ্বর্তনদের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না।’