দুর্বৃত্তের ভয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামে একদল দুর্বৃত্ত এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রীর ভিটেমাটি দখল নিতে ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামে একদল দুর্বৃত্ত এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রীর ভিটেমাটি দখল নিতে একের পর এক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তদের হুমকির মুখে একমাত্র সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং নিরাপত্তা চেয়ে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী রোজিনা সুলতানা।

এ ঘটনায় রোজিনা সুলতানা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার স্ত্রী রোজিনা (৪৫) ও ছেলে ফাহিম হাওলাদারকে (১৪) নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন। ২০১৭ সালের ২৫ জুন ফরিদ উদ্দিন মারা যান। এতে ছেলে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন রোজিনা। ফরিদ মারা যাওয়ার পর প্রতিবেশী নূর ইসলাম ব্যাপারী (৬০) রোজিনার জমির ওপর দিয়ে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করতে চান। রোজিনা রাস্তা নির্মাণে জমি না দেওয়ায় বিরোধ তৈরি হয়। সেই থেকে রোজিনাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে ভিটেমাটি দখলের পাঁয়তারা শুরু করে নূর ইসলাম।

স্বামীর মৃত্যুর পর আমার জমিতে নূর ইসলাম ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করতে চান। আমি রাস্তা নির্মাণ করতে জমি না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হন।
রোজিনা সুলতানা, বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী

রোজিনা সুলতানা বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর আমার জমিতে নূর ইসলাম ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করতে চান। আমি রাস্তা নির্মাণ করতে জমি না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি ষড়যন্ত্র করে আমার ভিটেমাটি দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিন বছর ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পত্তি দখল নিতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সন্ত্রাসী নিয়ে একাধিকবার হামলা চালিয়ে দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় একাধিক মামলা ও দুটি জিডি করা হয়।’

রোজিনা বলেন, ‘বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আমি নূর ইসলামসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করি। গত ২৯ মার্চ আসামিরা আদালত থেকে জামিনে এসে ৩০ মার্চ আমার বাড়িতে পুনরায় দ্বিতীয় দফায় হামলা চালিয়ে ভাতিজা জুয়েল হাওলাদারকে মারধর করে আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেন। বিষয়টি ওই থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করলে পুলিশ একটি জিডি নেয়। আমি বাড়ি না ছাড়ায় ১৬ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা বাড়ি দখল নিতে তৃতীয় দফায় হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে, নতুবা আমাকে ও আমার কলেজপড়ুয়া ছেলে ফাহিম হাওলাদারকে হত্যার হুমকি দেয়। হুমকির ঘটনায় ২০ এপ্রিল গৌরনদী মডেল থানায় আরেকটি জিডি করি। বর্তমানে আমি সন্তানকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। নিরাপত্তা চেয়ে ও বিচারের দাবিতে সরিকল ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, থানাসহ প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’

এ ব্যাপারে জানতে নূর ইসলাম ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগমের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তা করতে মোরা জায়গা চাইছি, না দেওয়ায় জোর কইররা রাস্তা নিছি। কিন্তু বাড়িতে হামলা লুটপাট কারা করছে, হেইয়া মোরা জানি না।’

ওসি মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা আছে। আসামিদের বিরুদ্ধে খুব শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’