দৃশ্যমান উন্নয়ন আমাদের ভোট চাওয়ার পথকে সহজ করেছে: আ.লীগ প্রার্থী

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌরসভার নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র মতিয়ার রহমান। প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ও পৌরসভার সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
মতিয়ার রহমান

প্রশ্ন :

এবার দিয়ে কয়বার পৌর নির্বাচনে অংশ নিলেন?

মতিয়ার রহমান: এবার দিয়ে পাঁচবার। তবে ১৯৯৯, ২০০৪ ও সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করি। কিন্তু ২০০৯ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জিততে পারিনি।

প্রশ্ন :

এবারের নির্বাচন ও আগের নির্বাচনগুলোর মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য আছে?

মতিয়ার রহমান: প্রথম নির্বাচনের ফিলিংসটা এক রকম। তবে পঞ্চমবারের মতো অংশ নিতে যাওয়া নির্বাচনের বিষয়টা আলাদা। মাঝখানে রয়েছে বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ১৯৯৯ সালের বাংলাদেশ এবং আজকের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক তফাত। দৃশ্যমান উন্নয়ন আমাদের ভোট চাওয়ার পথকে সহজ করেছে। তবে পার্থক্য একটা আছে, অতীতের নির্বাচনের তুলনায় এবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দুর্বল। তাই নৌকার জয় নিশ্চিত।

প্রশ্ন :

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে বলেন?

মতিয়ার রহমান: আমার বাবা জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন। আমিও দীর্ঘদিন জনসেবার মধ্যেই আছি। নির্বাচন আমাদের সারা বছরই চলে। যেদিন জয়লাভ করি, পরদিনই ভাবি পাঁচ বছর পর মানুষের কাছে যেতে হবে। সব সময়ই মানুষের কাছে যাওয়ার মতো পরিবেশটা ধরে রাখতেই হয়। সে জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিই।

প্রশ্ন :

ভোটাররা কেন আপনাকে ভোট দেবেন?

মতিয়ার রহমান: সাধারণ ভোটাররা এখন অনেক সচেতন। তাঁদের একটা ধারণা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশের উন্নয়ন করছেন, তাতে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র একই চেইনের না হয়, তাহলে ডেভেলপমেন্ট করা সম্ভব না। সে জন্য ভোটাররা উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করতে চায়।

প্রশ্ন :

নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কেমন?

মতিয়ার রহমান: ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে ভোটারদের। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। সে কারণে আরেকটু বেশি করে মানুষ ঝুঁকেছে আমার দিকে। ভোটাররা কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হতে চান না। সবার চাওয়া কাকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।

প্রশ্ন :

আপনি তো তিন দফায় মেয়র ছিলেন। এই মুহূর্তে দর্শনার উল্লেখযোগ্য সমস্যা কী?

মতিয়ার রহমান: সমস্যা তো চিরকালই ছিল, কেয়ামত পর্যন্ত সমস্যা থাকবে। মানুষের চাহিদার কারণে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হয়।

প্রশ্ন :

এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনার কথা বলেন?

মতিয়ার রহমান: আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। কেরুকে আধুনিকায়ন করতে সিবিএ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে চলেছি। এ ছাড়া দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর বাস্তবায়ন হলে এলাকার বড় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশের অনেকেই দর্শনাকে থানা মনে করতেন। তাঁরা জানতেন না, দর্শনা থানা নয়। আমাদের এমপি আলী আজগার দর্শনাকে থানায় উন্নীত করেছেন। উপজেলা হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। এগুলো হলে আমাদের এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হবে।

প্রশ্ন :

সুষ্ঠু ভোট নিয়ে কোনো আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি আছে কি না?

মতিয়ার রহমান: আতঙ্ক নেই। বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই। কারণ, এলাকায় দলমত-নির্বিশেষে সবাই বলবেন, আমার বাবা সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম শামসুল ইসলাম ছিলেন অতি শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি কখনো হঠকারিতা পছন্দ করেননি। আমি মেয়র হওয়ার পর দর্শনায় কোনো সন্ত্রাস বা হঠকারিতাকে প্রশ্রয় দিইনি। প্রশ্রয় দেব না। সে আমার দলেরই হোক, আর যে দলেরই হোক।

প্রশ্ন :

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে এবং কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

মতিয়ার রহমান: এটা সঠিক নয়। কিছু স্থানে নৌকা প্রতীকের পোস্টার রশিসহ ছিঁড়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে এসব হয়েছে। আমি কি তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দায়ী করব? কোনো বিবেকবান মানুষ এসব করতে পারে না। ভোটারদের সমর্থন আমার পক্ষে রয়েছে। হুমকি-ধমকির প্রশ্ন ওঠে না। কেন এসব করতে হবে?

প্রশ্ন :

ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি?

মতিয়ার রহমান: প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত আমাদের কর্মীবাহিনী কাজ করছে। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ব্যাপকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁদের সমর্থকদের সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার। আশা করি, ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভোট পড়বে।

প্রশ্ন :

জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী এবং কাকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন?

মতিয়ার রহমান: আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগই আশাবাদী। মহিদুল ভাই (পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র মহিদুল ইসলাম) প্রার্থী হলে তিনিই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতেন। এবার ধানের শীষ না মোবাইল, কে নিকটতম হবেন, তা বলা মুশকিল। গতবার নয় হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলাম। এবার অনেক বড় ব্যবধানে জিতব।

প্রশ্ন :

নাগরিক সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা কি?

মতিয়ার রহমান: নিচু এলাকা হিসেবে পুরাতন বাজার, আজমপুর ও মোহাম্মদপুরে ড্রেনেজ সমস্যা রয়েছে। এসব এলাকার ড্রেনেজ সমস্যার সমাধানসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, দর্শনা কলেজে সম্মান শ্রেণিতে নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষক পদায়ন করতে চেষ্টা করব। পাশাপাশি পৌর মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

প্রশ্ন :

বিশেষ কোনো পরিকল্পনা থাকলে বলেন?


মতিয়ার রহমান: এখানে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এবং দর্শনা রেলস্টেশনের কারণে অনেক নামীদামি মানুষের বসবাস। দর্শনায় অনেক আগে থেকেই সাংস্কৃতিক আন্দোলন চলমান। সর্বদলীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় দিবসগুলো উদ্‌যাপন করি। সীমান্তবর্তী শহর হওয়ায় মাদক নিয়ে সমস্যায় আছি। সাংস্কৃতিক চর্চাকে চাঙা করে মাদকমুক্ত দর্শনা গড়াই আমার প্রধান লক্ষ্য।