বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ‘কথা বলা চশমা’

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিশেষ ‘কথা বলা চশমা’ তৈরির গবেষণা দলের তিন শিক্ষার্থীসহ দুই শিক্ষক
প্রথম আলো

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ধরনের ‘কথা বলা চশমা’ বানানোর দাবি করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুই বছর চেষ্টায় এই সাফল্য পেয়েছেন। তাঁরা বিশেষ ধরনের চশমাটির নাম দিয়েছেন ‘টকিংগ্লাস’।

গবেষক দলটির দাবি, এই চশমা ব্যবহারকারীর সামনে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু থাকলে নামসহ তা শনাক্ত করতে পারবে। এই তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেবে। প্রাথমিকভাবে টকিংগ্লাসটিতে মোট ছয়টি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। ফিচারগুলো হলো লেখাপড়ার জন্য অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন, ফেস রিকগনিশন (মানুষ চেনা), অবজেক্ট ডিটেকশন (বস্তু খুঁজে পাওয়া), অবজেক্ট রিকগনিশন (বস্তু চেনা), কারেন্সি রিকগনিশন (টাকা চেনা), ডিরেকশন ডিটেকশন (দিক নির্ধারণ), লোকেশন আইডেনটিফিকেশন (অবস্থান নির্ধারণ)। এটি মানুষের চেহারা চেনা, পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ দিক নির্ণয়, কোনো বস্তু দেখলে নামসহ চিহ্নিত করা, বাংলা-ইংরেজি বই পড়া, কোনটি কত টাকার নোট তা বলে দেবে।

গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল মাহমুদ, রিপন চন্দ্র দাস ও বিপুল মণ্ডল। পুরো দলের তত্ত্বাবধানে (সুপারভাইজার) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল ও কো–সুপারভাইজা ছিলেন সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল মাহমুদ, রিপন চন্দ্র দাস ও বিপুল মণ্ডল। পুরো দলের তত্ত্বাবধানে (সুপারভাইজার) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল ও কো–সুপারভাইজা ছিলেন সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

দলনেতা সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা এই ডিভাইসে আরও সুন্দর কিছু ফিচার যুক্ত করে খুব শিগগির প্রত্যেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। যখন একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির কাছে কোনো মানুষ থাকবেন না, তখনো ওই ব্যক্তি নিজেকে স্বাবলম্বী ভাবতে পারবেন। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে।’

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিশেষ ‘কথা বলা চশমা’
প্রথম আলো

গবেষক দলের তত্ত্বাবধায়ক সহকারী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, এই চশমার মধ্যে ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ধরনের সেন্সর রাখা হয়েছে। এটা দেখতে সাধারণ চশমার মতোই হবে। এতে বিভিন্ন ধরনের প্রসেসিং উপাদান থাকবে। আর্টিফিশিয়াল থিংকিং ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা হয়েছে এতে। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন স্বাভাবিক মানুষের মতো সব কাজ করতে পারেন। তাঁরা চশমাটি স্থানীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকসহ আরও কয়েকজনকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া ফলাফল নিয়ে তাঁরা আশাবাদী।

গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ২০১৮ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারের এটুআই প্রকল্পে ‘কথা বলা চশমার’ কাজের জন্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করা হয়। এরপর এটুআই প্রকল্পে ডিজঅ্যাবিলিটি চ্যালেঞ্জ ফান্ডে ২০১৮ সালে প্রকল্পটি গৃহীত হয়। টানা দুই বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহারে সফল হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল।

গবেষকেরা বলছেন, টকিংগ্লাস বা কথা বলা চশমার জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। চশমায় সংযুক্ত থাকবে ক্যামেরা। সেটি ছবি নিয়ে সে বিষয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে পড়ে শোনাবে।