দেবী এসেছেন বিপন্নকে রক্ষা করতে

সমুদ্রপথে পাচার হওয়া মানবসন্তানদের দুর্দশার প্রতীকী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় চট্টগ্রাম নগরের হাজারী লেইন পূজা উদ্যাপন পরিষদের দুর্গাপূজার মণ্ডপে l ছবি: সৌরভ দাশ
সমুদ্রপথে পাচার হওয়া মানবসন্তানদের দুর্দশার প্রতীকী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় চট্টগ্রাম নগরের হাজারী লেইন পূজা উদ্যাপন পরিষদের দুর্গাপূজার মণ্ডপে l ছবি: সৌরভ দাশ

মাঝ সমুদ্রে ভাসছে তরি। ভাসমান সেই তরিতে বিপন্ন মানবসন্তান। জীবন রক্ষায় আরাধনায় বসেছেন তাঁরা। তাঁদের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন দেবী দুর্গা। ডুবতে বসা সেই নৌকা থেকে রক্ষা করেন সন্তানদের। সমুদ্রে ভাসমান তরিতে অসহায় মানুষের এই চিত্র পাওয়া যায় চট্টগ্রাম নগরের হাজারী লেইন পূজা উদ্যাপন পরিষদের দুর্গাপূজার মণ্ডপে। এখানকার এবারের পূজার মূল থিম হচ্ছে ‘বিপন্ন মানবতা’। এর মাধ্যমে চলতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে সমুদ্রপথে পাচার হওয়া মানবসন্তানদের দুর্দশা ও তার থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রতীকী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়।
হাজারী লেইনের মতো নগরের অন্যান্য পূজামণ্ডপেও বিভিন্ন আলোচিত ইস্যু নিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। গতকাল সোমবার মহাসপ্তমীর দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের পূজামণ্ডপগুলোতে ছিল পূজার্থীদের ভিড়। বিকেলের দিকে কিছুটা ফাঁকা থাকলেও সন্ধ্যা থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। ছিল দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে প্রতিটি মণ্ডপে ছিল পুলিশ ও আনসার সদস্যদের উপস্থিতি।
হাজারী লেইন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জহরলাল হাজারী প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ছিল সমুদ্রপথে মানব পাচার। এবার যুদ্ধবিগ্রহ থেকে রক্ষা পেতে স্বদেশ ছেড়েছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে মাতৃভূমি ছেড়ে সমুদ্রপথে ভিনদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রতারকের খপ্পরে সেখানে অসহায় হয়ে পড়েন অনেকেই।
জহরলাল বলেন, অসহায় মানবসন্তানদের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে দেবী দুর্গা মর্ত্যে নেমে আসেন। একে একে দমন করতে থাকেন অসুররূপী সব মানব পাচারকারীকে। তারপর ডুবন্ত নৌকা থেকে তাঁর সন্তানদের রক্ষা করেন। এই থিম নিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে।
গতকাল দুপুরে রানা মহাজন ও সুজন দাশ বলেন, বিশ্বজুড়ে আলোচিত মানব পাচারকে পূজায় তুলে ধরার ভাবনাটিই আলাদা।
এদিকে চট্টগ্রামের গোসাইলডাঙ্গার একতা গোষ্ঠীর থিম ছিল ‘পদ্মা সরোবরে দেবীবন্দনা’। পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অজয় কুমার চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক সত্যজিৎ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ ধ্বংস করতে মহিষাসুর চারদিকে আগুন লাগিয়ে দেয়। মহিষাসুরের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে সাত ঋষি তপস্যায় বসেন। তাঁদের তপস্যায় জেগে ওঠেন শিব। জাগ্রত শিবের জ্যোতি পড়ে পদ্মা সরোবরে। সেখান থেকে বের হয়ে আসেন দেবী দুর্গা। তারপর মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে হয়। যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত করেন দেবী দুর্গা। আলোকসজ্জায় এই থিম প্রকাশমান হয়েছে।
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা রাজাপুর লেইনের পূজামণ্ডপে দেবী দুর্গার নয়টি রূপ তুলে ধরা হয়েছে। মেঘের আড়াল থেকে বের হয়ে অসুরকে বধ করতে থাকেন দেবী দুর্গা। পূজার সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা রাজিব মিত্র প্রথম আলোকে বলেন, শাস্ত্রের বিধিবিধান মেনে এবারের থিম সাজানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রত্নাকর দাশ জানান, নগরে এবার ২৮৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজামণ্ডপগুলোতে ৬ থেকে ১২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।