দোষীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে আন্দোলনের সমাপ্তি শিক্ষার্থীদের

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের সমাপ্তির ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনিক ভবনের নিচতলা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটা
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস ও পরবর্তী সময়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটার নিশ্চয়তা পাওয়ায় মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচির সমাপ্তি টানলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বাস মালিক-শ্রমিক সমিতি, নগরীর রূপাতলী হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে জেলা প্রশাসন ও নগর পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন, বাস মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও নগরীর রূপাতলী হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে রুদ্ধদ্বার এই বৈঠক চলে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন, প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার দাস (শিক্ষা ও আইসিটি), সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান, উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোকতার হোসেন, বরিশাল পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি মমিনউদ্দিন, বরিশাল জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, রূপাতলী হাউজিং এলাকার বাড়ির মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন প্রমুখ।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন ফজলুল হক। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদেরসহ ওই ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে এমন নিশ্চয়তা দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।’

ফজলুল হক আরও বলেন, ‘ওই দিনের ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমন সংঘাত আর সংঘটিত হবে না বলেও বৈঠকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন বাস মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও স্থানীয় বাড়ির মালিকদের প্রতিনিধিরা। এমন অবস্থায় আমরা সড়ক অবরোধসহ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ায় আন্দোলন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী অমিত হাসান বলেন, ‘হামলার ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল আমাদের প্রধান দাবি। এই দাবি দুটি বাস্তবায়নে কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। আমরা আশা প্রকাশ করছি দ্রুতই সব দাবি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হবে।’

বৈঠক শেষে বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি মমিনউদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। কিন্তু এই হামলার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তরা পরিবহনমালিক বা শ্রমিকদের কেউ না। আমরা শিক্ষার্থীদের নিশ্চয়তা দিয়েছি, ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।’

বৈঠকের পর উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই দাবি আসে। সেই দাবি অনুযায়ী আমরা বৈঠকে বসি। সেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির ব্যাপারে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন।’

১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ দুই শিক্ষার্থীকে নগরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে বিআরটিসি বাসের এক শ্রমিক মারধর ও লাঞ্ছিত করেন। এর প্রতিবাদে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রফিক নামের অভিযুক্ত বাসশ্রমিককে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এর জেরে পরিবহনশ্রমিকেরা গতকাল মঙ্গলবার রাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকায় মেসে বসবাসরত অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান।

গভীর রাতে নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ তিন দফা দাবিতে আজ সকাল থেকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে আরও দুই বাস শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হলে বাস মালিক-শ্রমিকেরা ২০ ফেব্রুয়ারি বাস ধর্মঘট আহ্বান করেন।

বাসমালিক-শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবরোধ-ধর্মঘটে বরিশাল থেকে দক্ষিণের ৫ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি পথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব পথের যাত্রীরা। এরপর উভয় পক্ষ ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাঁদের কর্মসূচি এক দিনের জন্য স্থগিত করে।

আজকের সমঝোতা বৈঠকের পর এ বিষয়ে নগর পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোকতার হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদেরও তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান। এ ছাড়া রূপাতলী এলাকায় পুলিশ টহল টিম ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’