দেড় কিলোমিটার সড়কের ভোগান্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের দেয়াললিখন

শরীয়তপুরে সড়ক সংস্কার চেয়ে গ্রামের বাড়ির দেয়ালে শিক্ষার্থীদের দেয়াললিখন
ছবি: প্রথম আলো

‘আমরা শিশু, আমাদের প্রতি অবহেলা কেন?’, ‘আমার বাবা ট্যাক্স দেয় আমরা কেন সড়ক দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে পারব না?’, ‘পাকা রাস্তা চাই, নিরাপদে স্কুলে যেতে চাই’ এমন সব স্লোগান গ্রামের বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে লিখে রেখেছে শিশুশিক্ষার্থীরা। শিশুদের অভিযোগ, শরীয়তপুর জেলা শহরের ৬ কিলোমিটার দূরত্বে তাদের গ্রাম। কিন্তু গ্রামের দেড় কিলোমিটার ইটের ও মাটির ভাঙা সড়ক মেরামত করা হয় না। তাই শিশুরা প্রতিবাদস্বরূপ দেয়ালে লিখন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

গ্রামবাসী জানায়, শরীয়তপুর জেলা শহরের পাশে পালং ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের গ্রাম পাটানি গাঁও ও ধামসী। গ্রাম দুটির পাশ দিয়ে জেলা শহর থেকে ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলা সদরে যাতায়াতের পাকা সড়ক। ওই সড়কের বৃক্ষিতলা থেকে গ্রামে যাওয়ার দেড় কিলোমিটার সড়ক। সড়কটি ২০ বছর আগে ইট দিয়ে সংস্কার করা হয়। গত ১৫ বছরে তা–ও ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো গাড়ি, রিকশা, ভ্যান সড়কটি দিয়ে গ্রামে যেতে পারে না। তাই গ্রামের বাসিন্দারা সড়কটি দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন।

পাটানি গাঁও ও ধামসী থেকে শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের দূরত্ব সাত কিলোমিটার আর পৌরসভা কার্যালয়ের দূরত্ব সাড়ে ছয় কিলোমিটার। গ্রাম দুটির শিক্ষার্থীরা শহরের দুটি সরকারি বিদ্যালয়, দুটি বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও পাশের বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। আর গ্রাম দুটির অধিকাংশ বাসিন্দা জেলা শহরে চাকরি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ ও ব্যবসা করেন। পাকা সড়কে নেমে তাদের দেড় কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। জরুরি ও কৃষিপণ্য পরিবহনে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ভুগতে হয় অসুস্থ রোগী নিয়েও।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার পাটানি গাঁও ও ধামসী গ্রামের বেহাল সড়ক। গত বৃহস্পতিবারের চিত্র
ছবি: প্রথম আলো

জেলা শহরের পালং উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্ময় মণ্ডল ও আটং বি এম ইউসুফ আলী মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তৃষ্ণা মণ্ডল। তারা জানায়, ছোটবেলা থেকেই তারা এ সড়ক ভাঙা দেখে আসছে। তারা অভিভাবকদের কাছে শুনেছে, সড়কটি সংস্কার করার জন্য এমপি, ডিসি ও ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে গেছেন তাঁরা। কিন্তু কেউ সড়কটি পাকা করার কাজে এগিয়ে আসেননি। তাই তারা তাদের কষ্টের কথা দেয়ালে লিখেছে। প্রতিবাদস্বরূপ তারা সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে।

পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন দেওয়ান বলেন, সড়কটি সংস্কার ও পাকা করার জন্য দুই দফা প্রস্তাব এলজিইডিতে (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি।

এলজিইডি শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ওই সড়ক ডিপিপিভুক্ত কোনো প্রকল্পে না থাকায় তা পাকা করা যায়নি। এখন প্রাক্কলন তৈরি করা হচ্ছে। শিগগির পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

পাটানি গাঁ ও ধামসী গ্রামের সড়কটি নিয়ে আন্দোলনের বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসনের। এরপর গত সপ্তাহে ওই গ্রামে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহরের এত কাছের দুটি গ্রামে যাতায়াতের সড়কটির এমন হাল দেখে অবাক হয়েছি। এলজিইডির প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রাক্কলন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য।’