দেড় বছর ধরে লভ্যাংশ পাচ্ছেন না ১১১ গ্রাহক

কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সঞ্চয় ব্যুরো নওগাঁ শাখার ১১১ জন গ্রাহককে। এসব গ্রাহক তাঁদের ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে প্রায় দেড় বছর ধরে কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না। মূলধনের টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না তাঁরা। দিনের পর দিন সঞ্চয় অফিসে ধরনা দিয়েও কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না তাঁরা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুনে বিভাগীয় অডিটে বেশ কিছু গ্রাহকের সঞ্চয়ের প্রায় ৫ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল ধরা পড়ে। পরে বিভাগীয় তদন্তে বের হয়ে আসে, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নওগাঁয় সঞ্চয় অফিসে ৬২ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র কেনার জমা ভাউচার জালিয়াতি করে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা সঞ্চয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন গত বছরের ১৫ জুন ওই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তভার আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপরে।

মামলার তদন্তে দেখা যায়, অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেন ছাড়াও ওই কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও জড়িত। এমনকি মামলার বাদী সাবেক সঞ্চয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মেলে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় আরও গ্রেপ্তার হন রংপুর বিভাগীয় সঞ্চয় অফিসের সাবেক উপপরিচালক মহরম আলী, নওগাঁ সঞ্চয় অফিসের উচ্চমান সহকারী হাছান আলী ও অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেন।

দুর্নীতি ও অনিয়ম করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন সঞ্চয় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ এর মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদের।’
আবদুল জলিল, বাসিন্দা, ভীমপুর গ্রাম, নওগাঁ সদর

ওই ৬২ জন গ্রাহক ছাড়াও সঞ্চয় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সঞ্চয়পত্র কিনে দুর্ভোগে পড়েছেন আরও ৪৯ জন গ্রাহক। সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে প্রকৃত ভাউচার দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনলেও সঞ্চয় অফিস থেকে বলা হচ্ছে ওই সব গ্রাহকের নামের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো টাকা জমা হয়নি। এ পরিস্থিতি গত বছরের ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় ভুয়া ভাউচার চিহ্নিত হওয়া ৬২ জন গ্রাহক ও প্রকৃত ভাউচারে টাকা জমা দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা না হওয়ায় ৪৯ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের মূলধন ও মুনাফার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনার কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না ওই ১১১ জন গ্রাহক।

নওগাঁ সদর উপজেলার ভীমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক আবদুল জলিল বলেন, ‘২০১৮ সালের জুলাই মাসে সোনালী ব্যাংকে জমা দেওয়া ৫ লাখ টাকার রসিদ দেখিয়ে নওগাঁ সঞ্চয় অফিস থেকে সঞ্চয়পত্রের বই সংগ্রহ করি। প্রতি তিন মাস পরপর নওগাঁ সঞ্চয় অফিস থেকে মুনাফা পেতে থাকি। ২০১৯ সালের জুন মাসে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের লভ্যাংশ তুলতে গেলে সঞ্চয় অফিসে জানানো হয় আমার হিসাবে সমস্যা থাকায় আপাতত মুনাফা উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে জানতে পারি আমার সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নাকি কোনো টাকাই জমা হয়নি। দুর্নীতি ও অনিয়ম করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন সঞ্চয় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ এর মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদের।’

সরকারি দপ্তরের সাবেক কর্মচারী সত্তরোর্ধ্ব আবু সালেহ মো. মুসা বলেন, ‘মূল টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। টাকা না পেয়ে পরিবার নিয়ে অনেকটা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে নওগাঁ সঞ্চয় অফিসের বর্তমান সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ১১১ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের হিসাব আপাতত স্থগিত করা রয়েছে। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই করার নেই।