দোকানে ট্রেনের টিকিট, গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা

যাত্রীবাহী ট্রেন
প্রতীকী ছবি

গাইবান্ধা শহরের পৌর মার্কেটের ব্যবসায়ী মিলন মিয়া মালামাল আনার জন্য প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় যান। করোনার কারণে রেলস্টেশন থেকে টিকিট বিক্রি বন্ধ। এ জন্য তিনি শহরের কম্পিউটারের দোকানগুলো থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটেন। এ জন্য তাঁকে প্রতিটি টিকিটে ৮০-১০০ টাকা বেশি দিতে হয়।
মিলন মিয়া বলেন, ‘টাকাপয়সা নিয়ে যাতায়াত করি। তাই ট্রেনে বেশি নিরাপদ বোধ করি। নিজের ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বাধ্য হয়ে কম্পিউটারের দোকানগুলোতে টিকিটপ্রতি ৮০–১০০ টাকা বেশি দিতে হয়।’
গাইবান্ধা শহরে মিলন মিয়ার মতো অনেকেই কম্পিউটারের দোকান থেকে ট্রেনের টিকিট কাটছেন। শহরের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে এখন আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো দাম নেওয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধা রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে সীমিতসংখ্যক ট্রেন চলাচল করছে। বর্তমানে লালমনিরহাট থেকে আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা যাতায়াত করছে। এই ট্রেনে প্রতিদিন গাইবান্ধার জন্য টিকিট বরাদ্দ ৮১টি। গাইবান্ধা থেকে ঢাকার একটি শোভন শ্রেণির টিকিট ৪৪৫ টাকা, শীতাতপ চেয়ার ৮৫১ টাকা এবং শীতাতপ কেবিন ১ হাজার ৩৬ টাকা। আগে ৮১টি টিকিটের মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশন থেকে ৪১টি হাতে হাতে ও ৩৯টি অনলাইনে বিক্রি হতো। করোনা পরিস্থিতিতে সব টিকিটি অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে।

শহরের স্টেশন রোড, ডিবি রোড, সার্কুলার রোড, গোরস্তান রোড, ভিএইড রোডে বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে ট্রেনের টিকিট কাটা হচ্ছে। প্রতিটি টিকিট ৮০–১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

শহরের স্টেশন রোড, ডিবি রোড, সার্কুলার রোড, গোরস্তান রোড, ভিএইড রোডে বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে ট্রেনের টিকিট কাটা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার শহরের ভিএইড রোডের আলম মিয়ার কম্পিউটার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি গাইবান্ধা থেকে ঢাকার অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করলেন। শোভন শ্রেণির টিকিটের দাম ৪৪৫ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই যাত্রী জানালেন, তাঁর কাছ থেকে ৮০ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে কম্পিউটার দোকানের মালিক আলম মিয়া বলেন, ‘আমি টিকিটপ্রতি ২০–৩০ টাকা নিই। কারণ, দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও ইন্টারনেট খরচ তো আছে। একটু বেশি না নিলে আমাদের কীভাবে পোষাবে?’

শহরের স্টেশন রোডের আতোয়ার রহমানের কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি ঢাকার অগ্রিম টিকিট চাইছেন। দোকানি এ প্রতিবেদককে দেখে অতিরিক্ত দাম চাইলেন না। দোকান থেকে সরে গিয়ে একটু পর ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, টিকিটপ্রতি ১০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হয়েছে।
আতোয়ার রহমান বলেন, ‘১০০ টাকা বেশি নিইনি। দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও ইন্টারনেট খরচ হয়। তাই সামান্য কিছু বেশি নিয়েছি। কারণ, ই-মেইল খুলতে সময় লাগে, বিকাশ নগদে টাকা পাঠাতেও খরচ হয়।’
শহরের সালিমার সুপারমার্কেটের ব্যবসায়ী বাপ্পা সাহা বলেন, ‘শীতাতপ চেয়ার শ্রেণির একটি টিকিট ৮৫১ টাকা। কিন্তু গত মঙ্গলবার ১০০ টাকা বেশি দিয়ে ৯৫১ টাকায় অগ্রিম টিকিট কিনেছি। না কিনে উপায় কী? নিজের কম্পিউটার নেই যে অনলাইনে টিকিট কিনব।’

গাইবান্ধা রেলস্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রির কথা শুনেছি। এটি নিয়ন্ত্রণে আমাদের কিছু করণীয় নেই। একজন ভ্রমণকারী ই-মেইল, পাসওয়ার্ড ও মুঠোফোন নম্বর দিয়ে চারটি পর্যন্ত টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। বিকাশ, রকেট, নগদ প্রভৃতি মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করার পর টিকিট মেলে।’