দোয়ারাবাজার উপজেলায় উপনির্বাচন: কেন্দ্রে ভোটারের ‘খরা’

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। কিন্তু বেলা ১১টা বাজলেও কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। আমবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র, সুনামগঞ্জ, ২৭ জানুয়ারিছবি: খলিল রহমান

শীতের সকাল। ভোটকক্ষের বাইরে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন রোদ পোহাচ্ছেন। কেউ কেউ বারান্দায় বসে আছেন আয়েশি ভঙ্গিতে কিন্তু ভোটার নেই। মাঝেমধ্যে একজন, দুজন এসে নীরবে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেন্দ্রের বাইরেও ভোটের যে আমেজ থাকার কথা, সেটির ছিটেফোঁটাও নেই।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার আমবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম মারা যান।

আমবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে আসা দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাংশু কুমার সিংহ তখন বলেন, ‘শুধু এই কেন্দ্র নয়, সকাল থেকে যে কয়টি কেন্দ্র ঘুরেছি, সব কটিতে ভোটার উপস্থিতি কম দেখেছি। ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে বলে মনে হয় না।’

আমবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অনুকুল চন্দ্র দাস জানান, তাঁর কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৮২২ জন। ছয়টি বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৫৮ জন।

কেন্দ্রের ৬ নম্বর বুথে ভোটার সংখ্যা ৯২৪। আড়াই ঘণ্টায় ভোট দিয়েছেন মাত্র ৩ জন। ওই কক্ষের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা তো ভোট নেওয়ার জন্য বসে আছি। কিন্তু ভোটাররা তো আসছেন না। বেলা বাড়লে উপস্থিতি বাড়বে এই আশায় আছি।’

এই কক্ষে চার প্রার্থীর চারজন এজেন্ট থাকার কথা থাকলেও হাসিনা বেগম নামের এক নারী এজেন্ট ছিলেন শুধু। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান তানভীর আল আশরাফী চৌধুরীর কাপপিরিচ মার্কার এজেন্ট। হাসিনা বলেন, ‘আর কেউ নাই, আমি একাই। ভোটারও নাই, কোনো ঝামেলাও নাই।’

পাশে ৫ নম্বর কক্ষে গিয়ে জানা যায়, সেখানে ৪৩৭ ভোটের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৮ জন। ৩ নম্বর কক্ষে ৪৫০ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ২১টি।

আমবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জহির মিয়া (৪০) বলেন, মানুষ তো ভোটের খবর জানেই না।
প্রার্থীরাও আসেননি। তেমন কোনো প্রচারণাও ছিল না। এ কারণেই ভোটার কম। স্থানীয় রামপুর গ্রামের বাসিন্দা আফিকুল ইসলাম বলেন, ভোটে মানুষের এমনিতেই আগ্রহ নেই। মানুষ মনে করে ভোট সুষ্ঠু হয় না। রাতের ভোট সব নষ্ট করে দিয়েছে।

স্থানীয় মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ বলেন, প্রার্থীদের চোখে পড়ার মতো কোনো প্রচারণাও ছিল না। পোস্টারিং ছিল না। অনেক এলাকায় প্রার্থীরা যাননি। ৩০ ভাগ ভোট পড়বে বলে মনে হয় না।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে ইউএনও দেবাংশু কুমান সিংহ বলেন, উপনির্বাচন বলেই হয়তো মানুষের আগ্রহ কম। এ ছাড়া প্রার্থীদের প্রচারণাও কম ছিল। সবখানে তাঁরা হয়তো যেতে পারেননি। আবার এখন হাওরে বোরো ধানের আবাদ চলছে। এতে মানুষের ব্যস্ততা আছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলায় কেন্দ্র ৫৯টি। ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ২২৬ জন। উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নুরুল ইসলাম। বিদ্রোহী হিসেবে আছেন দেওয়ান তানভীর আল আশরাফী চৌধুরী (কাপপিরিচ), স্বতন্ত্র হিসেবে জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এম এ বারী (আনারস), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু সালেহ (লাঙ্গল)।