দৌলতদিয়া-কাজিরহাটে অবৈধভাবে স্পিডবোটে চলছে যাত্রী পারাপার

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ছাড়াই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহন চলছে
এম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে প্রায় চার বছর ধরে স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহন চলছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে যাত্রীরা গাদাগাদি করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রকাশ্যে অবৈধভাবে স্পিডবোট চললেও যেন দেখার কেউ নেই।

সম্প্রতি কাঁঠালবাড়ি-বাংলাবাজার নৌপথে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর স্পিডবোট চলাচলে কড়াকড়ি থাকলেও দৌলতদিয়ায় তার প্রভাব পড়েনি। এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে এই নৌপথে অবৈধভাবে স্পিডবোট চলছে। বেপরোয়া গতি ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে প্রকাশ্যেই চলছে ১০০ সিসির এসব স্পিডবোট।  

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লকডাউনে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত সোমবার থেকে আবার স্পিডবোট চালু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন দৌলতদিয়া ও কাজিরহাট নৌপথে ৪টি ১০০ সিসির স্পিডবোট যাত্রী পারাপার করছে। বর্ষাকাল, ঈদের সময় স্পিডবোটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা থাকলেও এসব বোটে গাদাগাদি করে যাত্রী পার হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে টিকিটের গায়ে লাইফ জ্যাকেট পরার কথা বলা হলেও তা নেই। ২০ থেকে ২২ মিনিটে দৌলতদিয়া থেকে কাজিরহাট পৌঁছানো সম্ভব হওয়ায় অনেকে স্পিডবোটে যাতায়াত করে থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পাশে স্পিডবোটে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে। যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব মানা বা মাস্ক পরার বিষয়ে একেবারে উদাসীন।

কারোরই লাইসেন্স নেই। আমারও নেই।
স্পিডবোটচালক মো. আলাউদ্দিন

স্পিডবোটচালক মো. আলাউদ্দিন এভাবে গাদাগাদি করে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, আগে দিনে ৮ থেকে ১০টি স্পিডবোট চলত। যাত্রী কমে যাওয়ায় বোট কমিয়ে অর্ধেক হওয়ায় অনেকক্ষণ পরপর ট্রিপ হচ্ছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করা হয়। স্পিডবোট চালানোর কোনো লাইসেন্স আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারোরই লাইসেন্স নেই। আমারও নেই।’ ভাড়া বেশি নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগে ভরপুর যাত্রী গেলে ২৫০ টাকা করে নেওয়া হতো। এখন যাত্রীসংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।’

কাজিরহাটের বোটচালক বকুল সরদার বলেন, ‘পাবনার রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বোটের মালিক। আমরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে থাকি। ছাড়ার আগে হাত ধুইয়ে, স্প্রে করে যাত্রীদের বোটে তোলা হচ্ছে। ২৫ থেকে ২৬ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কম নিচ্ছি।’ বোট চালানোর অনুমোদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মালিকপক্ষ বলতে পারবেন। আমার লাইসেন্সের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি, অনুমোদন পাইনি।’

দৌলতদিয়ায় দায়িত্বরত মালিকপক্ষের প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়ার ২টি ও কাজিরহাটের ২টি বোট চলছে। এক বছর আগে এই রুটে চলাচলের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ে কাগজপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি।

বিআইডব্লিউটিএ ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, ‘দৌলতদিয়া-কাজিরহাট নৌপথে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপারের ব্যাপারে অনেক আগেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে অনুরোধ করেছি। তাদের যাত্রী বহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছি।’ অবৈধভাবে যাত্রী পারাপার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সব বিষয় তো আমি একা দেখভাল করি না। আরও তো অন্যান্য বিভাগ রয়েছে।’