দৌলতদিয়ায় কিশোরী-তরুণীদের বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার ২

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে কিশোরী ও তরুণীদের বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ।

শনিবার দিনগত রাতে যৌনপল্লি এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুঞ্চি গ্রামের আমির হোসেন (৪৫) ও গোয়ালন্দের উত্তর দৌলতদিয়ার কবির হোসেন (৪২)। ২০ জানুয়ারি গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলাটি করেন এক ব্যক্তি। সেই মামলায় ওই দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৯ জানুয়ারি রাতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে মামলার বাদীর ঘরে এক তরুণী প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁর কাছে ওই তরুণী যৌনপল্লি থেকে উদ্ধারের আকুতি জানান। ওই ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবাকেন্দ্রের ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানান। ৯৯৯ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীরকে বিষয়টি জানানো হয়। ওসি তরুণীর সঙ্গে ফোনে বিস্তারিত জানার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে পল্লিতে অভিযান চালান। পরে পল্লির প্রভাবশালী নাজমা বেগমের বাড়ি থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় পাশের কক্ষ থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে পুলিশ আরও দুই কিশোরীকে উদ্ধার করে। তাঁদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদের পর বেশ কিছু তথ্য পায় পুলিশ। সেই তথ্যের ভিত্তিতে নাজমার বাড়ির পাশে বিশেষভাবে তৈরি গোডাউনে বেশ কয়েকজন কিশোরীর সন্ধান পাওয়া যায়। রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালিয়ে অন্ধকার কক্ষ থেকে আরও ১১ কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা নাজমার মেয়ে ঝর্ণা বেগম (২৫) ও বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আনন্দ পালিয়ে যান।

এ ঘটনার বিষয়ে ২০ জানুয়ারি রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান জেলা পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান। উদ্ধার কিশোরী ও তরুণীদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তাঁদের পারলারে, বাসাবাড়িতে কাজ দেওয়ার কথা বলে ৫ থেকে ৯ মাস আগে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে একটি চক্র। তাঁদের অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হতো। দিনে সাধারণ খাবারের পাশাপাশি মোটাতাজাকরণের বিশেষ ওষুধ খাওয়ানো হতো। বাড়িওয়ালা ও তত্ত্বাবধায়কের কথামতো, তাঁদের পতিতাবৃত্তিতে নামানো হতো। তাঁদের কান্নার আওয়াজ যাতে কেউ শুনতে না পায়, সে জন্য উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্স বাজানো হতো। এমন অন্ধকার জীবন থেকে উদ্ধার হয়ে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চান তাঁরা।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর নাজমা বেগমের বাড়ি থেকে এক কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় নাজমাকে গ্রেপ্তার করে মানব পাচার আইনের মামলায় জেলে পাঠানো হয়। সেই মামলায় নাজমা বেগম এখনো জেলেই আছেন।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখে জোর করে পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগ পেয়ে ১৯ জানুয়ারি গভীর রাতে দুই দফা অভিযানে ১৪ কিশোরী ও তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানকালে নাজমার মেয়ে ও তত্ত্বাবধায়ক পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার গভীর রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।