দৌলতদিয়ায় শেষ মুহূর্তে ভিড়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে গ্রেপ্তার ৯

শেষ মুহূর্তের ঈদ যাত্রায় মানুষের ভিড়। আজ সকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে।
ছবি: প্রথম আলো

শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রায় মানুষের ভিড় রয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। ঢাকা থেকে আসা দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষ যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই ছুটে আসছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এমন ভিড় লক্ষ করা যায় ফেরিঘাট এলাকায়। আর এ সুযোগে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের থেকে মাইক্রোবাস ও লোকাল বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। র‌্যাব-৮ ফরিদপুর কার্যালয়ের একটি দল অভিযান চালিয়ে লক্ষাধিক টাকাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখা যায়, প্রতিটি ফেরিঘাটেই মানুষের ভিড়। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ফেরিগুলো যানবাহনের সঙ্গে যাত্রী বোঝাই করে দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড়ছে। বিপরীতে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে অনেকটা যানবাহনশূন্য অবস্থায় ফেরিগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। ঘাটে আসা দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীরা ফেরিঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন উপায়ে ছুটছেন। কারও কাঁধে রয়েছে শিশুসন্তান, কারও দুই হাত ভরে ব্যাগ। কেউবা দীর্ঘ পথ হাঁটছেন বুকে ও পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে। স্বাস্থ্যবিধি যথারীতি উপেক্ষিত।

ফেরিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, কয়েক দিন ধরে শুধু মানুষ ছুটছেন। প্রতিটি ফেরিই মানুষে ভরপুর। ফেরিতে মানুষের ভিড় দেখে মনে হয় না দেশে করোনার কারণে লকডাউন চলছে।

স্বামী-সন্তান নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাচ্ছিলেন তাছলিমা খাতুন। স্বামীর কাঁধে শিশুসন্তান। হাতে ব্যাগ। তাছলিমা খাতুনের হাতেও ব্যাগ। কষ্ট করে ছুটে চলার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘বছরের এই একটি দিনের জন্য সবাই অপেক্ষা করে। হাজারো কষ্ট সামলে সবাই গ্রামের বাড়ি পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে চায়। প্রথমে ভেবেছিলাম ঢাকায় থাকব। যেহেতু পরিবহন এবং ফেরি চলছে, তাই কষ্ট হলেও বাড়ি যাচ্ছি।’

টার্মিনাল এলাকা থেকে যশোরগামী মাইক্রোবাসের সহকারী রাসেল বলেন, ‘যশোর পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ৬০০ টাকা করে নিচ্ছি।’ ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারপরও তো মাইক্রোবাসে জায়গা দিতে পারছি না। ফেরিতে নদী পাড়ি দিয়ে আসার পরই গাড়ি ভরে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ফিরোজ শেখ বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট ফেরি রয়েছে। যানবাহনের পরিস্থিতি বুঝে ফেরি চলবে। তবে বর্তমানে সব ঘাটেই যানবাহন এবং যাত্রীর চাপ অনেকটা কমে গেছে। ঢাকা ছেড়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলগামী কিছু গাড়ি এবং মানুষের চাপ পাটুরিয়ায় থাকায় দৌলতদিয়া থেকে দ্রুত ফেরিগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।’

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে গ্রেপ্তার ৯

দৌলতদিয়া ঘাট টার্মিনাল এলাকায় অস্থায়ী কাউন্টার খুলে দক্ষিণাঞ্চলগামী মাইক্রোবাস ও লোকাল বাসে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে গতকাল বুধবার বিকেলে র‌্যাব-৮ ফরিদপুরের একটি দল অভিযান চালায়। অভিযানে ৯ জন গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে র‌্যাব ১ লাখ ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৯টি মুঠোফোন জব্দ করেছে। গ্রেপ্তার দৌলতদিয়া মজিদ শেখের পাড়ার হাসেম কাজী শুকুর আলীর ছেলে নজরুল ইসলামের (২৪) নেতৃত্বে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছিল। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করছিলেন সরকারদলীয় স্থানীয় নেতারা। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাব-৮ ফরিদপুর কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. খোরশেদ আলম।
পরে মমিনুল ইসলাম (২২), বুলবুল মোল্লা (২৮), শেখ সাদী (২১), শহিদুল সরদার (২৮), আরজু বেপারী (২৬), শহিদুল ইসলাম (২৩), সামসুদ্দিন মণ্ডল (৭১) ও মহিউদ্দিন শেখকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের সবার বাড়ি দৌলতদিয়া ঘাটসহ গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। তাঁদের বিরুদ্ধে র‌্যাব বাদী হয়ে বুধবার রাতেই গোয়ালন্দ ঘাট থানায় চাঁদাবাজির মামলা করে। পুলিশ দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের রাজবাড়ীর আদালতে প্রেরণ করে।