‘দ্বীপবন্দী’ সময়টুকু সেন্ট মার্টিনের মানুষের সেবায় ব্যয় করলেন চিকিৎসকেরা

সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে এসে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে একদল চিকিৎসক। আজ সোমবার বিকেলে টেকনাফের সেন্ট মার্টিন ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গত শনিবার বেড়াতে এসেছিলেন একদল চিকিৎসক। গতকাল রোববারই তাঁদের ফেরার কথা। কিন্তু আবহাওয়া বৈরী। জাহাজ চলছে না। একপ্রকার ‘দ্বীপবন্দী’ সময় কাটছিল। এই সময়টুকু দ্বীপের বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে কাটালেন তাঁরা।

ভ্রমণে আসা ওই চিকিৎসক দলের প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম। গতকাল রাতে হোটেল ও আজ বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডরমিটরিতে এই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তাঁদের সহযোগিতা করেছেন হাসপাতালে সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈকত হাসান।

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত শনিবার প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে আসা দেড় হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। আজও আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বলবৎ থাকায় কোনো ধরনের জাহাজ সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ, কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রামের পথে চলাচল করেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সদস্যসহ চিকিৎসকদের ৬৭ জনের দলটি শনিবার সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে আসে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের জাওয়াদের সতর্কসংকেত বলবৎ থাকায় তাঁরা গতকাল ফিরে যেতে না পেরে আটকা পড়েন। আটকে পড়া সবার মতামতের ভিত্তিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দলের ৬৭ জনের মধ্যে ৩০ জন চিকিৎসক। তাঁদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। তাঁদের মধ্যে মেডিসিন, শিশুরোগ, গাইনিসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন।

চিকিৎসক দলটির অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। তাঁদের মধ্যে মেডিসিন, শিশুরোগ, গাইনিসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

দ্বীপের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার খবরে প্রচুর নারী–পুরুষ ভিড় করেছেন সেন্ট মার্টিন হাসপাতালে। নারী–পুরুষের পাশাপাশি শিশুদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

সেন্ট মার্টিন ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুল্লাহ খান বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা ও দ্বীপের বেড়াতে আসা পর্যটকদের কথা চিন্তা করে ২০০৯ সালে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের ১০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের পর উদ্বোধন করা হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় অদ্যাবধি আউটডোর চালু রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একদল চিকিৎসকের স্থানীয় বাসিন্দাদের চিকিৎসা দেওয়ায় জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

আরও পড়ুন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানকার মানুষের আচার-ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করে। মানুষের কল্যাণে কাজ করা চিকিৎসকদের কাজ। তাই বেড়াতে এসে আটকা পড়ার পর কিছুটা সময় তাঁদের সঙ্গে ব্যয় করেছি। আগামীতে আরও একটি চিকিৎসক দল নিয়ে সেন্ট মার্টিন আসার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আজও ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত বলবৎ থাকায় আটকা পড়া পর্যটক টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হতে পারেনি। কাল মঙ্গলবার মধ্যে সতর্কসংকেত প্রত্যাহার করা হলে আটকা পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার জন্য টেকনাফ থেকে জাহাজ পাঠানো হবে।