ধরমপাশায় চেয়ারম্যানের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মাছ লুটে নেওয়ার অভিযোগ

সুনামগঞ্জ জেলার ম্যাপ

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সুনই জলমহালের কয়েকজন মৎস্যজীবীকে মারধর করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারীরা প্রায় চার লাখ টাকা মূল্যের মাছ লুটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। গতকাল শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি রাতে চেয়ারম্যানের অনুসারীরা হামলা চালিয়ে শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫) নামের একজনকে হত্যা করেন বলে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ। তিনি সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ছিলেন।

উপজেলা প্রশাসন, ধরমপাশা থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুনই জলমহালটি ছয় বছরের জন্য ইজারা পায় ধরমপাশার সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। ওই সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ জলমহালটির ইজারামূল্য পরিশোধ করে প্রায় পাঁচ মাস আগে জলমহালটির পাড়ে সমিতির সদস্যদের বসবাস ও অন্যান্য কাজের জন্য পাঁচটি খলাঘর তৈরি করেন। অন্যদিকে, একই সমিতির সভাপতি দাবি করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারী সুবল বর্মণ জলমহালটির ইজারামূল্য সরকারি কোষাগারে জমা দেন। তিনি সেখানে তিনটি খলাঘর তৈরি করেন। ৭ জানুয়ারি রাতে চন্দনদের খলাঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাধা দিতে গিয়ে খুন হন শ্যামাচরণ। ঘটনার এক দিন পর স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন, তাঁর ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনসহ ৬৩ জনকে আসামি করে ধরমপাশা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নিহত শ্যামাচরণের ছেলে চন্দন। তবে সাংসদের নাম থাকায় পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি বলে অভিযোগ।

পুলিশের দাবি, কিছু ভুল সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে নিহত ব্যক্তির ছেলে চন্দন ও তাঁর লোকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছ থেকে অভিযোগটি নিয়ে আর থানায় জমা দেননি। পরে এ ঘটনায় ধরমপাশা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১০ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৬০ থেকে ৬৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

গত ১৪ জানুয়ারি চন্দন সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৬৩ জনকে আসামি করে ধরমপাশা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। বিচারক একই ঘটনা নিয়ে থানায় করা মামলাটির প্রতিবেদন পাওয়ার আগপর্যন্ত আদালতে দায়ের করা মামলাটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। থানায় হওয়া মামলাটি ২ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটি এখন ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেলে চেয়ারম্যানের শতাধিক অনুসারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সুনই জলমহালটিতে যান এবং তিনটি নৌকায় থাকা প্রায় চার লাখ টাকা মূল্যের মাছ লুটে নেন বলে চন্দনদের পক্ষের অভিযোগ। সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহসভাপতি মণীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ অভিযোগ করেন, ৭ জানুয়ারি রাতে যাঁরা হামলা-অগ্নিসংযোগ ও তাঁর ভাই শ্যামাচরণকে হত্যা করেছিলেন, তাঁদের অনেকে গতকাল আবার হামলা করেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে আজ রোববার থানায় অভিযোগ করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। তবে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফেরদৌসুর রহমান বলেন, জলমহালটিতে সুবলদেরও তিনটি খলাঘর আছে। ওই খলাঘরের টিন খুলে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন খবর পেয়ে ১৫ থেকে ২০ জন সেখানে গিয়েছিলেন। মাছ লুটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিপদে ফেলার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।

ধরমপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজ সকাল নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে জলমহালটিতে গিয়ে কাউকে পাইনি। মাছ লুট করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, জলমহালটি নিয়ে উচ্চ আদালতে পৃথক দুটি মামলা ছিল। উচ্চ আদালত থেকে সুবলদের মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে। জলমহালটিতে সংঘবদ্ধ লোকজন যাচ্ছেন—এমন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানাকে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন