ধরমপাশায় জব্দ করা সেই খননযন্ত্র এবার পুলিশের জিম্মায়

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় জব্দ করা খননযন্ত্র দিয়ে মনাই নদ থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনায় যন্ত্র দুটি উদ্ধার করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এবার খননযন্ত্রের পাইপগুলো নষ্ট করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর খননযন্ত্র দুটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের জিম্মা থেকে উপজেলার মধ্যনগর থানার পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

জব্দ করা খননযন্ত্র দিয়ে আবারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলো অনলাইনে প্রচারের পর আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মনাই নদে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান।

মনাই নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে সপ্তাহখানেক আগে খননযন্ত্র দুটি জব্দ করা হয়। জব্দ করা যন্ত্র বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউপির চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদের জিম্মায় রাখা হয়। জব্দ করার পরদিন যন্ত্র দুটি দিয়ে আবার বালু উত্তোলন করা হলে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রচারের পর তা বন্ধ করা হয়। এর পাঁচ দিন পর ওই খননযন্ত্র দিয়ে গতকাল মনাই নদ থেকে আবারও বালু উত্তোলন করা হয়। সেই খবরও প্রচার হয় প্রথম আলোয়।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের বংশীকুণ্ডা বাজারের দক্ষিণ পাশে মনাই নদের অবস্থান। দুই মাস ধরে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ ও ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আজিবুর রহমান মিলে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। বালু তুলে নদসংলগ্ন জমি ভরাট করে বসতভিটা তৈরি করাসহ তা অন্যত্র বিক্রি করে আসছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে নদসংলগ্ন ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছিল।

ভুক্তভোগী দুজন কৃষক গত ৩০ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে ১১ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধ্যনগর থানার পুলিশ নিয়ে ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান উপজেলার বংশীকুণ্ডা বাজারের দক্ষিণ পাশে থাকা মনাই নদে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। ওই সময় সেখানে থাকা খননযন্ত্রের মালিক সাজু মিয়াকে (৩৫) আটক করা হয়। এ ছাড়া নদে থাকা যন্ত্রটি জব্দ করে তা বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউপির চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদের জিম্মায় রাখা হয়। আর সাজুকে মধ্যনগর থানায় নিয়ে আসা হয়। ‘ভবিষ্যতে আর এমন কাজ করবেন না’ বলে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করলে সাজু সেখান থেকে ওই দিন বিকেলে মুক্তি পান।

টানা ১৯ ঘণ্টা খননযন্ত্রটি বন্ধ থাকার পর জব্দ করা সেই যন্ত্র দিয়ে পরদিন ১২ আগস্ট সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ওই নদে আবার বালু উত্তোলন করা হয়। প্রথম আলোর অনলাইনে এ নিয়ে ওই দিন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় চাপের মুখে পড়ে ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বেলা দুইটা থেকে সেই জব্দ করা খননযন্ত্র দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবারও ওই নদ থেকে বালু উত্তোলনের কাজ শুরু করেন।

খননযন্ত্রের মালিক বংশীকুণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা সাজু মিয়ার সঙ্গে গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করেন। তবে বলেন, ‘আমাদের ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমার খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের কাজ করছি। এতে আমার কোনো দোষ নেই।’

তবে আজ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে খননযন্ত্রটি জব্দ করার সাজু মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও কথা বলা যায়নি।

এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আজিবুর রহমান আজ বলেন, ‘আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণে এলাকার বাইরে আছি। শুনেছি, ইউএনও স্যার আজ সকালে এসে মনাই নদ থেকে জব্দ করা খননযন্ত্র দুটি উদ্ধার করেছেন এবং সঙ্গের পাইপগুলো নষ্ট করে দিয়েছেন। মনাই নদ থেকে বালু উত্তোলনকাজ ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ সাহেব করে আসছিলেন। অযথা আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কটি পাকা করা হবে। তাই সড়কটির কিছুটা উঁচু করার জন্য নদ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে তা ওই সড়কে ফেলা হচ্ছিল। এটি বেআইনি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে গতকালই খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’ আজিম মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমার নির্দেশে এর আগে ওই নদী থেকে বালু উত্তোলন করা ও বালু অন্যত্র বিক্রিও করার বিষয়গুলো অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’

ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান আজ বেলা দুইটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জব্দ করা খননযন্ত্র দুটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখা হয়েছিল। সেই দুটি খননযন্ত্র মনাই নদ থেকে আজ সকালে উদ্ধার করার পাশাপাশি এটির সঙ্গে থাকা পাইপগুলো শ্রমিক দিয়ে ভেঙে নষ্ট করা হয়েছে। খননযন্ত্র দুটি এখন মধ্যনগর থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।