ধরমপাশায় বৃদ্ধ জেলেকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩


সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫) নামের এক মৎস্যজীবীকে গলা কেটে হত্যা, জলমহালে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার বেখইজোড়া গ্রামের জোয়াদ মিয়া (৫২), রনি খান (৩৮) ও বীর দক্ষিণ পশ্চিমপাড়া গ্রামের তানিন চৌধুরীকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সুনই জলমহালে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার রাতেই ২৩ জনকে আটক করে থানা–পুলিশ। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় দুজনকে ছেড়ে দিয়ে ২১ জনকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

উপজেলা প্রশাসন, থানা–পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের মনাই নদের সুনই জলমহালটি জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাধীন। ১৪২২ সন থেকে ১৪২৭ সন পর্যন্ত ছয় বছরের জন্য এটি ইজারা পায় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ যথারীতি জলমহালটির খাজনা পরিশোধ করেন। তিনি তাঁদের সমিতির সদস্যদের বসবাস ও অন্যান্য কাজের জন্য জলমহালের পাড়ে খলাঘরসহ চারটি ঘর নির্মাণ করেন। একই সমিতির সভাপতি দাবি করে স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনের ছোট ভাই ধরমপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনের অনুসারী সুবল বর্মণ (৩০) নিজেকে সভাপতি দাবি করে ১৪২৭ সনের খাজনা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। তিন মাস আগে তিনি তাঁর লোকজন নিয়ে জলমহালটির পাড়ে দুটি ঘর নির্মাণ করেন। জলমহালটি নিয়ে একই সমিতির দুটি পক্ষের উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় আদালতের আদেশে এটিতে স্থিতিবস্থা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেযারম্যানের অনুসারীরা সংঘবদ্ধভাবে জলমহালটিতে হামলা চালিয়ে একটি খলাঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় সেখানে থাকা ১৫-২০ মণ জাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়াসহ চন্দনের সমিতির ১৫-২০ জনকে মারধর করা হয়। এতে বাধা দিলে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ও সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণের বাবা শ্যমাচরণ বর্মণকে (৬৫) গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওই রাতে ধরমপাশা থানা–পুলিশ সন্দেহজনক ২৩ জনকে আটক করেন। পরদিন সন্ধ্যায় তাঁদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

সুনই মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মণের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সমিতির সহসভাপতি নিহত শ্যামাচরণ বর্মণের ছোট ভাই মনীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (৫৫) বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা, খলায় অগ্নিসংযোগ, হামলা ও মারধরের ঘটনায় গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এমপি (সাংসদ) রতন, তাঁর ছোট ভাই রোকনসহ ৬৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি এজাহার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওসি আমাদের বলেছিলেন, এমপির নাম বাদ দেন, মামলা নেব। পরে আমরা অভিযোগটি নিয়ে চলে এসেছি। আমাদের এজাহারটি মামলা হিসেবে না নিয়ে রোববার রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে থানা–পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছে। আমরা থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ সুপারের কাছে সমিতির পক্ষ থেকে আবেদন করেছি।’
স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন বলেছেন, ‘আমি ঘটনার দিন ধরমপাশায় ছিলাম না। এটি এলাকাবাসী ছাড়াও সুনামগঞ্জের অনেকেই জানেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত একটি পক্ষ ফায়দা নেওয়ার জন্য এতে আমাকে জড়ানোর অপচেষ্টা করছে। আমি শুধু একজন সাংসদ হিসেবে নয়, সাধারণ জনগণ হিসেবে আমারও দাবি এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক। যারা এই ঘটনায় জড়িত ছিল না, তারা যেন কোনো অবস্থাতেই কোনো রকম হয়রানির শিকার না হয়, সেই বিষয়কেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।’
ধরমপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় রোববার রাতে থানার এসআই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬০-৬৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। এই মামলায় আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে ডিবির সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের করা মামলায় ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার রাতে যে ২১ জনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত শনিবার চন্দন বর্মণ যে অভিযোগটি দিয়েছিলেন, তাতে বেশ কিছু ভুল রয়েছে বলে সেটি চন্দন বর্মণ ও তাঁর লোকজন নিয়ে গিয়েছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে কাল বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে পাঠানো হবে।