ধরমপাশায় মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ১

সুনামগঞ্জ জেলার মানচিত্র
প্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মণ হত্যা মামলায় মাহবুব আলম ওরফে রিপন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সিলেট কার্যালয়ের একটি দল নিজ গ্রামের সামনের সড়ক থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

মাহবুব আলমের (৪৮) বাড়ি উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামে। গত ৭ জানুয়ারি উপজেলার সুনই জলমহালের পাশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ধরমপাশার সুনই জলমহালটি ১৪২২ থেকে ১৪২৭ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ইজারা পায় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ জলমহালটির খাজনা পরিশোধ করেন। তিনি সমিতির সদস্যদের বসবাস ও অন্যান্য কাজের জন্য জলমহালের পাড়ে পাঁচটি ঘর নির্মাণ করেন। একই সমিতির সভাপতি দাবি করেন সুবল বর্মণ (৩০)। তিনি স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের ছোট ভাই ধরমপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সুবল বর্মণ সুনই জলমহালের ১৪২৭ বঙ্গাব্দের খাজনা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। পাশাপাশি তিনি অনুসারীদের নিয়ে জলমহালের পাড়ে দুটি ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন।

৭ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে সুবল বর্মণ জলমহালের পাড়ে দুই শতাধিক লোক জড়ো করেন। তাঁরা চন্দন বর্মণের নির্মাণাধীন দুটি খলাঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। সেখানে থাকা মৎস্যজীবীদের মারধর শুরু করেন। ঘটনাস্থলে ছিলেন সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫)। হামলা ও মারধরের প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুন

নিহত শ্যামাচরণের ছেলে চন্দন বর্মণ (৩০) ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ধরমপাশা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে সাংসদ মোয়াজ্জেম, তাঁর ভাই মোজাম্মেলসহ মোট ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেয়নি পুলিশ। পরদিন রাতে ধরমপাশা থানার এসআই আরিফুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা ৬০-৬৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। আর চন্দন বর্মণ ১৪ জানুয়ারি সাংসদ মোয়াজ্জেমসহ ওই ৬৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু আদালতের বিচারক তখন শুনানি নিয়ে একই ঘটনায় পুলিশের করা মামলার প্রতিবেদন আদালতে আসা পর্যন্ত আবেদনটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন।

ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন সাংসদ মোয়াজ্জম। তিনি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর পরিবারের কারও কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁদের বিপদে ফেলার জন্য একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছে।

আরও পড়ুন

মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া মাহবুব আলম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। থানায় ও আদালতে জমা দেওয়া দুটি অভিযোগে মাহবুবকে আসামি করার আবেদন জানিয়েছেন নিহত শ্যামাচরণের ছেলে চন্দন বর্মণ। পিবিআই তাঁকে পুলিশের করা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। মামলাটি পুলিশ ও ডিবি হয়ে এখন পিবিআই তদন্ত করছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সিলেটের এসআই তারেকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ হত্যা মামলাটি ৬ মার্চ থেকে তদন্ত করছে পিবিআই। সাক্ষ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় মাহবুব আলমকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে।