ধরমপাশায় সাংসদ ও তাঁর দুই ভাইয়ের নামে আদালতে মামলার আবেদন

সুনামগঞ্জ জেলার ম্যাপ

সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনসহ ৬৩ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলার আবেদনে সাংসদের ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকন ও তাঁর বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদকে আসামি করা হয়েছে। এক বৃদ্ধকে গলা কেটে হত্যা, ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এই মামলার আবেদন করা হয়।

গত শনিবার ধরমপাশা থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হন নিহত ব্যক্তির ছেলে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মণ। তিনি বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার ধরমপাশা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন।

আদালতে মামলাটি দাখিল করার পর বিচারক মিছবাহ উদ্দিন আহমদ বাদীর জবানবন্দি শোনেন। এ ঘটনা নিয়ে থানায় আর কোনো মামলা হয়েছে কি না, বিচারক জানতে চান। একই ঘটনায় থানায় একটি মামলা চলমান থাকায় থানা থেকে আদালতে প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আদালতে দাখিল করা মামলাটি স্থগিত এবং থানা থেকে প্রতিবেদন আসার পর এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে আদেশ দেওয়া হয়। বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল হাই তালুকদার ও আরফান আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।

তবে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, ‘আমি আদালত থেকে আদেশের কপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। এটি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।’

উপজেলা প্রশাসন, থানা-পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মনাই নদের সুনই জলমহালটি জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাধীন। ছয় বছরের জন্য এটি ইজারা পায় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ যথারীতি জলমহালটির খাজনা পরিশোধ করেন। তিনি তাঁদের সমিতির সদস্যদের বসবাস ও অন্যান্য কাজের জন্য জলমহালের পাড়ে খলাঘরসহ পাঁচটি ঘর নির্মাণ করেন। একই সমিতির সভাপতি দাবি করে স্থানীয় সাংসদের ছোট ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান রোকনের অনুসারী সুবল বর্মণ (৩০) খাজনা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। তিন মাস আগে তিনি তাঁর লোকজন নিয়ে জলমহালটির পাড়ে দুটি ঘর নির্মাণ করেন। জলমহালটি নিয়ে একই সমিতির দুটি পক্ষের উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় আদালতের আদেশে এটিতে স্থিতাবস্থা রয়েছে।

আদালতে দাখিল করা মামলায় বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাংসদ রতনের হুকুমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রোকন ও তাঁর দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে জলমহালটিতে যান। খলাঘরে আগুন দেওয়াসহ সেখানে থাকা ১৫-২০ মণ জাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। অন্যদের মারধর করেন। এতে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য শ্যমাচরণ বর্মণ (৬৫) বাধা দিলে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই মনীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ অভিযোগ করেন, সাংসদের নাম বাদ না দেওয়ায় থানা মামলা নেয়নি।
সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায়। অভিযোগ করলেই কেউ দোষী হয়ে যায় না। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে একটি পক্ষ ফায়দা নেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। ঘটনার তদন্তে যাঁদের নাম বেরিয়ে আসবে, তাঁদেরই যেন আইনের আওতায় আনা হয়।’

ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় গতকাল বুধবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সকালে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার রাতে ২৩ জনকে আটক করা হয়। পরে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ২১ জনকে ঘটনার পরের দিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে ৪ জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।