ধরমপাশায় হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসব

বোরো ধান কাটা উৎসব। আতলা হাওর, পাইকুরাটি ইউনিয়ন, ধরমপাশা, সুনামগঞ্জ, ৫ মার্চ বিকেল
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের ধরমপাশার পাইকুরাটি ইউনিয়নের বেখইজোড়া গ্রামের দীন ইসলাম (৪৪) নামের এক কৃষকের পাকা বোরো ধান কাটার মধ্য দিয়ে এ উপজেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসানের নেতৃত্বে সোমবার বিকেলে আতলা হাওরে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও শিক্ষকেরাও এই ধান কাটা উৎসবে যোগ দেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৬৮৫ হেক্টর। বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১৭ হাজার ১০২ মেট্রিক টন (চাল)। প্রতি কিয়ার (৩২ শতক) জমিতে ধানের উৎপাদন হচ্ছে ২২ মণ।

আতলা হাওরে ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ওই হাওরে স্থানীয় বেখইজোড়া গ্রামের কৃষক দীন ইসলামের সাড়ে পাঁচ হাল (১৯২০ শতক) জমি রয়েছে। ওই কৃষক সোমবার দুপুরে আট কিয়ার (প্রতি কিয়ার ৩২ শতক) জমির ধান কাটার সিদ্ধান্ত নেন। সে জন্য জমির মালিক ৩২ জন শ্রমিক নিয়োজিত করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওই জমির পাড়ে গিয়ে পৌঁছান এবং সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের পাশে থেকে তাঁরা ধান কাটতে শুরু করেন। কিছু সময় ধান কাটার পর ধান কাটা উৎসব উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম, পাইকুরাটির ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান প্রমুখ।

কৃষক দীন ইসলাম বলেন, ‘দুই দিন আগেও এই হাওরে আমি দুই কিয়ার জমির ধান কাটাইছি। প্রতি কিয়ারে ২২ মণ কইরা ধান অইতাছে। ভালা ফলন অওয়ায় আমার খুব খুশি লাগতাছে।’

পাইকুরাটি ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ধান কাটা উৎসবের আয়োজন করায় আমি গর্বিত ও আনন্দিত। কৃষকদের জমির ধান কাটতে ইউপি থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটার শ্রমিকেরা এ উপজেলায় এসে বোরো জমির ধান কাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে মুঠোফোনে আমার সঙ্গে কয়েকটি শ্রমিক দলের প্রতিনিধি যোগাযোগও করেছেন। প্রাকৃতিক কোনো রকম দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এপ্রিল মাসের মধ্যে এ উপজেলায় আবাদ করা বোরো জমির ধান কাটা সম্ভব হবে। যেভাবে ফলন হয়েছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। এ উপজেলাটি হাওরবেষ্টিত। এখানকার কৃষকেরা একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। হাওরের বুকে ধানের ভালো ফলন দেখে আনন্দে মন ভরে গেছে। এখানকার কৃষকদের ধান কাটাজনিত যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সার্বিক সহায়তা করা হবে।