ধর্মপাশায় গভীর রাতে গ্রামবাসীর চেষ্টায় রক্ষা পেল ২ হাজার একর জমির বোরো ধান

শুক্রবার রাত একটার পর ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের কাটাখালী ফসল রক্ষা বাঁধসংলগ্ন পানিনিষ্কাশনের যন্ত্রটিতে ফাটল ধরলে গ্রামবাসী মিলে বস্তা বস্তা মাটি ও বালু ফেলে তা সংস্কার করেন
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার একটি হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের পানিনিষ্কাশন যন্ত্র মেরামত করে প্রায় দুই হাজার একর জমির বোরো ধান রক্ষা করেছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত একটার পর উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের কাটাখালী ফসল রক্ষা বাঁধসংলগ্ন পানিনিষ্কাশনের যন্ত্রটিতে ফাটল ধরলে গ্রামবাসী মিলে বস্তা বস্তা মাটি ও বালু ফেলে তা সংস্কার করেন।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের কাটাখালী ফসল রক্ষা বাঁধের কাছে একটি পানিনিষ্কাশন যন্ত্র আছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় সেটিতে ফাটল ধরে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় কাউনাই নদের পানি ধীরে ধীরে এই ফাটল দিয়ে হাওরে ঢুকতে শুরু করে। একসময় পানির চাপ বাড়তে থাকে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মোকাররম হোসেন দ্রুত ধর্মপাশার ইউএনও মো. মুনতাসির হাসানকে বিষয়টি ফোন করে জানান। রাত সোয়া একটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন ইউএনও। রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর নয়াহাটি, মুক্তারপুর ও গাজীনগর গ্রামের শতাধিক লোক সেখানে বস্তাভর্তি মাটি ফেলে হাওরে পানি প্রবেশ আটকাতে পারেন।

সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা নাদিম কবীর বলেন, ‘ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে হাওরের ফসল রক্ষায় কৃষকসহ সব শ্রেণি–পেশার লোকজনকে সেখানে আসার জন্য বলা হয়। ইউএনও স্যারের উপস্থিতিতে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত শতাধিক লোককে নিয়ে কাজ করে আমরা নদীর পানি হাওরে যাতে না ঢুকতে পারে, সে জন্য মাটি ও বালুর বস্তা ফেলেছি।’

সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের এই যন্ত্র সংস্কার করা হচ্ছিল না। এ অবস্থায় মরিচা ধরে এটির একাংশে ফাটল দেখা দেয়। ইউএনওর তৎপরতায় ও স্থানীয় গ্রামবাসীর চেষ্টায় এখানকার বড় বিল, চাতল ও বাইরবন হাওরের প্রায় দুই হাজার একর জমির বোরো ধানডুবির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্যসচিব মো. ইমরান হোসেন বলেন, পানিনিষ্কাশন যন্ত্রটির একাংশে মরিচা ধরে এটিতে ফাটল ধরে যাওয়ায় ফাটলকৃত স্থান দিয়ে নদীর পানি ধীরে ধীরে হাওরে ঢুকছিল। স্থানটি দিয়ে যাতে হাওরে পানি ঢুকতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, এ উপজেলার মানুষজন হাওরের একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তাই হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।