ধর্মপাশায় ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল ১৮৫ হেক্টর জমির ধান

ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৮৫ হেক্টর জমির আধা পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ডোবাইল ফসল রক্ষা বাঁধে
ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ডোবাইল ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে হাওরের ১৮৫ হেক্টর জমির আধা পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই বাঁধের আওতায় ২০০ হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হেক্টর বোরো জমির আধা পাকা ধান কাটা হয়েছে। গত রোববার বিকেলে পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে বাঁধটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তারা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ওই বাঁধসংলগ্ন কংস নদের পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে বাঁধটি ভেঙে গিয়ে ডোবাইল হাওরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। প্রবল বেগে পানি ঢুকে এখানে থাকা ১৮৫ হেক্টর বোরো জমির আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যায়।

উপজেলা প্রশাসন, এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ডোবাইল ফসল রক্ষা বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে রয়েছে। ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধটির কাজের জন্য ২২ লাখ ৮১ হাজার ৩০৪ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি হলেন নূরুল হুদা ও সদস্যসচিব সাগর মিয়া। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এই বাঁধের কাজ শুরু করে তা চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করা হয়।

ডোবাইল হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জালাল মিয়া (৪০) বলেন, এই হাওরে তাঁর দুই হাল (১ হাল= ১২ কিয়ার, ১ কিয়ার= ৩২ শতক) বোরো জমি আছে। ঢলের পানিতে তাঁর সব জমি ডুবে গেছে।

ওই ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহ জামাল মিয়া বলেন, এই বাঁধে যাকে পিআইসির সভাপতি ও সদস্যসচিব করা হয়েছে, তাঁর ওই হাওরে কোনো জমি ছিল না। শুধু তা–ই নয়, উপজেলার বেশ কিছু বাঁধের পিআইসি গঠনের ক্ষেত্রে এমনটি করা হয়েছে। বাঁধের স্লোপ, কমপেকশন কিছুই সঠিকভাবে করা হয়নি। আর এ জন্য পানির চাপে বাঁধটি ভেঙে গেছে। সরেজমিনে তদন্ত করলে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে। এই বাঁধ ভেসে যাওয়ায় আরও কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে ডোবাইল ফসল রক্ষা বাঁধের ৭৫ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি নূরুল হুদা ও সদস্যসচিব সাগর মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ও ‍উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্যসচিব মো. ইমরান হোসেন বলেন, বাঁধের কাজ সঠিকভাবেই করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিও বিধি মোতাবেক গঠন করা হয়েছে। বাঁধের কাজ না পাওয়ায় এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বাঁধটি কংস নদের তীরে অবস্থিত। ‍উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল চাপের কারণে বাঁধটি ভেঙে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডোবাইল হাওরে ২০০ হেক্টর বোরো জমি আবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে অবশিষ্ট ১৮৫ হেক্টর বোরো জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার অন্যান্য ফসল রক্ষা বাঁধগুলো যাতে কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সব রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।