ধান কাটা শ্রমিক ও না ঘুমানো দলের এক রাতের গল্প

বিভিন্ন এলাকা থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরের বলদিঘাট গ্রামে ধান কাটতে এসেছেন ছয় শ্রমিক। ধান কাটা শেষে গতকাল বুধবার রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছিলেন কাওরাইদ বাজারে। বিষয়টি চোখে পড়ে এলাকার একদল তরুণের। তাঁরা তাঁদের জায়গা করে দিলেন স্কুলের ভেতরে। সারা রাত না ঘুমিয়ে তাঁদের জন্য নিজেরাই রান্না করলেন সাহ্‌রির খাবার।

তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে ২০-২২ দিন আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন এই শ্রমিকেরা। অধিকাংশ শ্রমিকের বাড়ি সিলেটে। শ্রীপুরের বিভিন্ন গ্রামে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ধান কাটছিলেন তাঁরা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে পরের দিনের জন্য অন্য এলাকায় চলে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। রাত কাটানোর জন্য তাঁরা বিগত দিনগুলোতে মানুষের বাড়ির বারান্দা ও মসজিদ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল তাঁরা থাকার মতো জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

আবহাওয়াও খারাপ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে তাঁদের ঘোরাঘুরি করতে দেখে তরুণেরা এগিয়ে যান। কাওরাইদ এলাকার রাহাত আকন্দের ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় একটি স্কুলের কক্ষ খোলার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। সেখানে শ্রমিকদের ঘুমানোর ব্যবস্থা হয়। তরুণেরা শ্রমিকদের জন্য সাহ্‌রি রান্না করেন সারা রাত ধরে।

ধান কাটার শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো এমন মানুষ আছে, বিশ্বাস ছিল না।’ বিশেষ করে এখন তরুণেরা মানুষের পাশে এভাবে দাঁড়ায় দেখে তিনি খুব খুশি। আশরাফুল বারবার বলছিলেন, ‘ছেলেগুলা খুব বালা।’ আরেক শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সারা রাত ছেলেগুলা ঘুমায় নাই। আমাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা কইরা তারা রান্না করছে আমাদের জন্য। এমন দরদি মানুষ পাওয়া মুশকিল।’

রাহাত আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিকেরা অসহায়ের মতো ঘোরাঘুরি করছিলেন। আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বললাম। জানলাম তাদের থাকার জায়গা প্রয়োজন। তাৎক্ষণিক আমার আরও তিন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে আসি। আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিই স্থানীয় একটি স্কুলে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দেব। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কক্ষ খোলার ব্যবস্থা হয়। শ্রমিকদের ঘুমাতে দিয়ে তাঁদের জন্য আমরা সাহ্‌রির খাবার রান্না করেছি। আমরা নিজেরাও তাদের সঙ্গে সাহ্‌রি খেয়েছি।’

কাওরাইদ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও সাবেক সেনাসদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণদের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের খবর পেলে মনটা ভালো হয়ে যায়। খুব আশান্বিত হই আমরা। আসলে পৃথিবীটাই বদলে দিতে পারে দুর্জয় তারুণ্য। তাদের গড়ে উঠতে দিলে, স্বাধীনতা দিলে দেশটা সোনার দেশে পরিণত হওয়া ব্যাপারই না।’