ধানের চিন্তায় উদ্বিগ্ন চাষি

সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যা দেখা দেয়। মাঝখানে এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে ২৭ জুন থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়া বস্তাভর্তি ধানের পাশে কৃষক মিজানুর রহমান। গতকাল দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরতলির ওয়েজখালি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

‘সেদিনের অবস্থা কিতা খইতাম। মনে অইছিল, সবতা ধ্বংস অইযাইব। হায়রে মেঘ (বৃষ্টি), লগে ঠাঠা (বজ্রপাত)। ঘরে পানি, বাইরে পানি। মানুষ যে যেখানে যেলা পারছে, জান লইয়া গিয়া আশ্রয় নিছে। আমরাও কোনোমতে একটা জায়গা গিয়া আশ্রয় লই। হিদিন (সেদিন) ঘরের ধান আর আনতাম পারছি না। পানিত ভিইজ্জা সব শেষ আমার।’

বোরো মৌসুমে শ্রমে-ঘামে তোলা ধানের এ সর্বনাশের কথা এভাবেই বলছিলেন কৃষক নুরুল গণি (৬৫)। সেদিন না পারলেও পরদিন তিনি একটি নৌকা নিয়ে ঘরের ভেতরে পানিতে নিমজ্জিত বস্তাভরা এসব ধান নিয়ে আসেন। ঘরের একটি কক্ষে এসব ধান রাখা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি তো থামছে না। বস্তায় ধান থাকতে থাকতে অঙ্কুর গজায়। এরপর মাঝখানে দুই দিন সামান্য রোদ উঠলে সড়কে ফেলে সেগুলো নাড়াচাড়া করেন। কিন্তু খুব একটা কাজ হয়নি। এখন ধান বেচতেও পারছেন না।

সুনামগঞ্জ শহরতলির ওয়েজখালি এলাকায় কৃষক নুরুল গণির বাড়ি। এখনো এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে পরিবার নিয়ে আশ্রিত আছেন। সেখানেই ধানের বস্তাগুলো এনে রেখেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা বলার সময় বস্তায় ভরা ধান দেখিয়ে নুরুল গণি বলেন, ‘এই ধান কত কষ্ট করি তুলছি। ধান দিয়ে পুরা বছর চলে। আমার আর কোনো ইনকাম নাই। এখন ধান যদি বেচতাম না পারি, তাইলে তো না খাইয়া থাকত অইব।’

নুরুল গণি জানান, শুধু তিনি একা নন, এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জের হাজার হাজার কৃষকের ধান গোলায় ভিজে নষ্ট হয়েছে। এ ধানের ওপর যেসব কৃষক পরিবার পুরোপুরি নির্ভরশীল, তারা দিশাহারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলো আছে সীমাহীন কষ্টে।

তাঁর পাশে থাকা একই এলাকার আরেক কৃষক মিজানুর রহমান জানান, তিনি বোরো মৌসুমে হাওরে অন্যের জমি বর্গায় চাষ করেন। বর্ষায় মাছ ধরে সংসার চালান। তাঁরও প্রায় ৫০ মণ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

সুনামগঞ্জে ১৬ জুন থেকে বন্যা দেখা দেয়। মাঝখানে এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে ২৭ জুন থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় নামছে পাহাড়ি ঢল। এতে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত তিন দিনে সুরমা নদীর পানি ৩২ সেন্টিমিটার বেড়েছে।