ধানের শীষ ও মোবাইল ফোনের ওয়াকওভারে আ. লীগের গোল

পৌরসভা নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষের তোফাজ্জল হোসেন খান যখন ভোট থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন, ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা ৪ মিনিট। একই সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোবাইল ফোন) সালমা আনিকাও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানান। পরের পুরোটা সময় ছিল কেবলই নৌকার।

দিন শেষে ধানের শীষ ও মোবাইল ফোনের কাছ থেকে ওয়াকওভার পেয়ে ফাঁকা মাঠে সোজা গোল দিয়ে বড় জয় পেয়ে যান নৌকার শওকত উসমান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং বর্তমান মেয়র।

নৌকায় ভোট পড়ে ১৩ হাজার ৩৯৫। ধানের শীষের ৫ হাজার ২৮২ এবং মোবাইল ফোনে যায় ২ হাজার ২২২ ভোট।

রোববার ভোটার ও নেতা-কর্মীদের আলাপচারিতায় জয় পরাজয়ের কারণ খোঁজা ইস্যুটি প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে জানা যায় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মানসিক ও সাংগঠনিক অবস্থান।

ভোট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কারণ হিসেবে বিএনপি প্রার্থী সামনে আনেন কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরের নৌকার সমর্থকদের প্রভাব বিস্তার, এজেন্ট বের করে দেওয়া, ব্যালেট পেপার ছিনিয়ে নেওয়া এবং প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা। ভোটের দিন অভিযোগ করার পর প্রার্থী তাঁর নিজের বাড়িতে চলে যান। নেতা-কর্মীদেরও এই নিয়ে কথা না বলার নির্দেশ দেন। নিরাপদে থাকার পরামর্শ ছিল তাঁর। ভোট থেকে সরে আসার এক দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এ নিয়ে দলটির আর কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নেই। এই মুহূর্তে এ নিয়ে কথা বলতে দলটির যত অনাগ্রহ। কৌশলগত কারণে নির্বাচন পরবর্তী সময়টিতে চুপ থাকা এবং প্রয়োজনে ঘরে ঘুমিয়ে সময় পার করার নীতি নিয়েছে।

আরিফুর রহমান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সামনে থেকে তিনি নির্বাচন পরিচালনার নেতৃত্ব দিয়েছেন। রোববার দুপুরে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। করণীয় জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। প্রশ্নে তাঁর উত্তর ছিল ছোট কিন্তু স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। প্রতিক্রিয়া দিয়ে লাভও নেই। কেবল সময় পার করা। সেই কারণে সব নেতা-কর্মীকে চুপ ও ঘুমনীতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে রেখেছি।’
একজন সমর্থক স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা ভোটে ছিলাম দুই ঘণ্টা। এই সময়ে ধানের শীষে পড়েছে ৫ হাজারের ওপরে ভোট। শেষ পর্যন্ত ভারসাম্য ধরে রাখতে পারলে জয় পাওয়া কঠিন হওয়ার কথা ছিল না।’

স্বতন্ত্র সালমা আনিকা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর স্বামী তরিকুল মোশতাক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক এবং শ্বশুর মোশতাকুর রহমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মোশতাকুর চেয়েও নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় পান। সালমা আনিকা অবশ্য দলের কাছে মনোনয়ন চাননি।

মেয়র পদে নারী প্রার্থী হিসেবে সালমা আনিকা ভোটারদের কাছে বাড়তি আগ্রহের জায়গা। বিশেষ করে নারী মহলে তিনি বিশেষ একটি জায়গা করে নিতে সক্ষম হন। তবে ভোটের দিন তিনি দুই ঘণ্টার বেশি মাঠে ধরে রাখতে পারেননি। পরে তড়িঘড়ি করে ভোট থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পুনরায় ভোট গ্রহণের লিখিত আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, শুরুর ১৫ মিনিট পর থেকে নৌকার সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল ও ব্যালেট নিয়ে নৌকায় সিল মারতে থাকেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোট থেকে সরে আসার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীও নিজেকে ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। তাঁর মুখেও এই নিয়ে বাড়তি কথা নেই। পরবর্তী করণীয় নিয়েও বিশেষ ভাবনা কাজ করছে না বলে মন্তব্য তাঁর। সালমা আনিকা বলেন, ভোটের দিন কী হয়েছে, খুব ভালোভাবেই জনগণ তা দেখেছে। মহান সৃষ্টিকর্তা বড় সাক্ষী। ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলার বিচার নিশ্চয় আল্লাহ এক দিন করবেন।

কে ভোট ছেড়ে দিল আর কে কী বলল, এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই আওয়ামী লীগের। ইস্যুটি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময়ও নেই বলে মন্তব্য খোদ বিজয়ী প্রার্থীর। বিজয়ী প্রার্থী শওকত উসমানের সঙ্গে কথা হয়, রোববার বেলা সোয়া একটার দিকে। তখন তিনি জয়–পরবর্তী সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদের গ্রামের বাড়িতে।

শওকত উসমান বিএনপি প্রার্থীকে ইঙ্গিত করে বলেন, যাঁর কোমরে জোর নেই। ভোট নেই। সমর্থন নেই। সমর্থক নেই, এই প্রার্থীর বর্জন ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। তিনি বলেন, এই জনপদ কেবলই নৌকার আর সাংসদ নূর মোহাম্মদের।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের মন্তব্য, নির্বাচনে টিকে থাকার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির এখন আর নেই। এখন তারা নির্বাচন করছে এই নামে একটি দল আছে, তা বোঝানোর জন্য।